চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

একটি গল্প বলতে চেয়েছি, সিনেমার ভেতরের গল্প: আলমগীর

দেশের তারকা অভিনেতা আলমগীর। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত এই নাম। পর্দার সামনে অভিনয় করে যেমন নাম কুড়িয়েছেন, তেমনি পর্দার পেছনে পরিচালনায়ও নিজেকে প্রমাণ করেছেন।তার পরিচালিত সিনেমাগুলোর মধ্যে নির্মম, নিষ্পাপ, বউ মা, মায়ের দোয়া উল্লেখযোগ্য। দীর্ঘদিন পর ফের নির্মাণে আলমগীর। এবার আসছেন সিনেমা সম্পর্কিত গল্প নিয়েই। ছবির নাম ‘একটি সিনেমার গল্প’। বৈশাখ উপলক্ষ্যে আসছে ১৩ এপ্রিল দেশব্যাপী মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ছবি মুক্তির আগে চ্যানেল আই অনলাইনে এসেছিলেন অভিনেতা ও নির্মাতা আলমগীর। ছবিটি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন তিনি:

প্রধান নারী চরিত্রের জন্য কেন ঋতুপর্ণা? বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন, এ চরিত্রে রূপ দেওয়ার মত দেশীয় কেউ কি ছিলেন না?
কেন ঋতু এ সিনেমায় তা উপলব্ধি করতে সিনেমাটি দেখতে হবে। আমার ৪৬ বছরের সিনেমা জীবন। কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়তো সঞ্চয় করেছি। অনেক হিসেব করে ঋতুপর্ণাকে কাস্ট করেছি। যুক্তিসঙ্গত কারণে। পাওয়ারফুল অভিনেত্রী। আমাদের অভিনেত্রীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান আমার রয়েছে। সিনেমা দেখলে বিশ্বাস করি কেউ দ্বিমত পোষণ করবেন না ঋতুপর্ণার অন্তর্ভূক্তি নিয়ে।

ঋতুপর্ণার বিপরীতে আরেফিন শুভ! বেশ চমকে ভরা সমন্বয়!
এটি সিনেমার মূল ইউএসপি। প্রেমে কি সব সময় বয়স মুখ্য? হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যাবে। একটা কবিতা বলি যেটা সিনেমার সংলাপ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘ভালোবাসা মানে তো/ বয়সের সাথে বয়সের মিল নয়/ ভালোবাসা মানে মনের সাথে/ মনের পরিচয়।’

দর্শক কেন সিনেমা হলে এসে ‘একটি সিনেমার গল্প’ দেখবে? নির্মাতা নায়ক আলমগীর বলে?
আজকের আমি আলমগীর হয়েছি পুরোটাই আমার দর্শকদের ভালোবাসার কারণে। সেই দর্শক প্রথম সিনেমাটি দেখবে একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পের জন্য। মৌলিক গল্পের জন্য। দীর্ঘদিন ধরে গল্পশূণ্যতায় ভুগছে ইন্ডাস্ট্রি। গল্পের অবনতিতে সিনেমাও নিজের রাস্তা হারিয়েছে অনেকটাই। আমি একটি গল্প বলতে চেয়েছি, সিনেমার ভেতরের গল্প।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবির মহরত অনুষ্ঠানে

কোন শ্রেণির দর্শকদের জন্য সিনেমাটি?
পরিবারের জন্য। আমি যতগুলো সিনেমা নির্মাণ করেছি সব পরিবারের জন্য। যাতে পরিবারের সবাই বসে একসঙ্গে সিনেমা উপভোগ করতে পারে। এই পরিবার সব শ্রেণির পরিবার। সারাজীবন পারিবারিক সিনেমা করেছি। এটাও তাই। চলচ্চিত্রের মানুষগুলোর সুখ দুঃখ হাসি কান্না উঠিয়ে এনেছি সিনেমায়।

কয়টি সিনেমা হলে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে?
সর্বোচ্চ ৫০টি টার্গেট রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩২টির মত নিশ্চিত হয়েছে।

কম মনে হচ্ছে না? বিনিয়োগ ফেরত আসবে?
কম মনে হচ্ছে না। বরং এটি যথার্থ। ‘আয়নাবাজি’ কয়টা দিয়ে শুরু করেছিল? বিনিয়োগ কি সব ছবিতে ওঠে? আমার সিনেমার মেরিট বলে দেবে পরের সপ্তাহে কি হচ্ছে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি! ডোন্ট গো এক্সাইটেড।

আপনার নির্মাণে সবগুলো ছবিতে ৫টি গান থাকে!
এ সিনেমাতেও ৫টি গান রয়েছে। কেমন একটা ট্র্যাডিশনের মত হয়ে গেছে।

গানগুলোর বিশেষত্ব কিছু আছে?
আমি মেলোডির বাইরে কিছু ভাবতে পারিনা। তবে এই সিনেমায় বর্তমানকে ধরতে চেষ্টা করেছি মিউজিকে।

শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা প্রথমবারের মত…
হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন। তার ৫২ বছরের ক্যারিয়ারে কখনও গান সুর করেননি। এ সিনেমাতে করেছেন। আর আঁখি করেছে গানটি। গাজী মাজহারুল আনোয়ার লিখেছেন। ‘গল্পকথার ওই কল্পলোকে/ জানি একদিন চলে যাব’। গানটি সবার ভালো লাগবে কথা দিতে পারি।

রবীন্দ্র সংগীত ব্যবহার করেছেন?
হ্যাঁ, আমারও পরাণ যাহা চায় ব্যবহার করেছি। তবে গানটি যারা গেয়েছে সেই নামগুলো কিন্তু চমক। অদিতি মহসিন, বাপ্পা মজুমদার এবং আঁখি আলমগীর।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবির দৃশ্যে শুভ ও ঋতুপর্ণা সেন

যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে আপনি অগ্রজ সিনেমা ব্যক্তিত্ব হিসেবে চলচ্চিত্র পরিবারের হয়ে সোচ্চার…
(প্রশ্ন থামিয়ে দিয়ে) বিষয়টা আগেই পরিস্কার করি, আমি যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে নই। যত আদান প্রদান হবে তত সবাই সমৃদ্ধ হবে। ৮৯-৯৫ পর্যন্ত আমি নিজে বাইরের দেশে কাজ করেছি নিয়মিত। বরং ওরা কম আসত। মুখিয়ে থাকত এদেশে এসে কাজ করার জন্য। কিন্তু আমি যৌথ প্রযোজনার যে কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে। এখন নীতিমালা হয়েছে। এমন অনেক উদাহারণ আছে যেগুলা সত্যিই লজ্জাজনক। বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে অন্য কেউ যদি নিয়মনীতি না মেনে কিছু করার অভিপ্রায় রাখে সেটি ঠিক নয়। যেমন, ঋতুর (ঋতুপর্ণা) কাজের বিষয়ে যথাযথ নিয়ম মেনে কাজ করাতে কোন অসুবিধা হয়নি। আমার এই সিনেমা যৌথ প্রযোজনায় হওয়ার কথা হয়েছিল। নানা কারণে আর হয়ে ওঠেনি।

এ নীতিমালায় যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা নির্মাণ সম্ভব?
অবশ্যই সম্ভব। তবে তারপরও যদি কিছু ব্যত্যয় থাকে তবে তা সংশোধন করা যাবে। কিন্তু একদম নিয়মহীনতার চাইতে নিয়ম যথার্থ।

পরিচালনার সময় অভিনয় স্বত্বা কতখানি প্রভাবিত করেছে? নিজের পরিচালনায় অভিনয় করতে গিয়ে কোন ঝামেলা হয়েছে?
আমিতো আসলে প্রথমে অভিনেতা তারপর পরিচালক। তবে অভিনয় স্বত্বা আমাকে চরিত্রদের বুঝতে সহায়তা করেছে। কিন্তু পরিচালক ভূমিকাকে ছাপিয়ে যায়নি। হ্যাঁ, নিজের পরিচালনায় অভিনয় করাটা চাপের। তবে সামলেছি ভালোভাবেই।

উৎসবে দেশের বাইরের সিনেমা প্রদর্শন নিয়ে আপনি কিছু কথা বলেছেন!
এখনও বলব। আমাদের সিনেমা অন্যকোথাও তাদের কোন উৎসবে কি প্রদর্শিত হয়? আমার জানা নেই। বিনিময় প্রয়োজন অবশ্যই। এতে বাজার বাড়ে। কিন্তু সেটি একতরফা হওয়াটা যুক্তিসংগত নয়।

‘একটি সিনেমার গল্প’ এর কাজ করার সময়ের কোন ঘটনা চট করে বলতে বললে কি বলবেন?
২ লটে ৩০দিন শুট করেছি। পুরোটাই বাংলাদেশে। প্রতিটা ঘটনাইতো মনে পড়ে। আর আমি সেটে পরিচালক সুলভ গাম্ভীর্য রাখতাম না। যদিও সবাই  ভয় পেত (হাসি)। হ্যাঁ, একটা কাজ বেশি হত তা হল শুভকে লেগপুলিং। আমি আর ঋতু মিলে শুভর পেছনে লেগে থাকতাম। মাঝে মধ্যে শুভ সেট থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আকাশে হাত তুলে বলত, আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম।

দীর্ঘ বিরতি শেষে পরিচালনায় ফিরলেন। প্রথম প্রশ্ন কেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন নিয়মিত হবেন?
আমার কাছে মনে হয়ে যে চলচ্চিত্র আমাকে আজকের আলমগীর বানিয়েছে তার জন্য কিছু করা উচিত। কেউ একজন এগিয়ে আসতে হয়। আমি নিজের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছি। আমাদের সিনিয়র অন্যরাও আবার চলচ্চিত্রে প্রযোজনা নির্মাণে নিয়মিত হবেন আশা করি। আমি আশা করি বছরে অন্তত একটি সিনেমা নির্মাণ করব।

‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবির দৃশ্যে চম্পা ও আলমগীর

সিনেমা হলে আসবার আগে প্রিমিয়ার এর একটি চল রয়েছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রিতেই। কিন্তু আপনার সিনেমার প্রিমিয়ার হয় না। এবারও কি?
আমার ‘নিস্পাপ’ থেকে সব ছবির কখনও প্রিমিয়ার করিনি। হ্যাঁ, প্রেস মিট করেছি। কিন্তু প্রিমিয়ার নয়। এ সিনেমারও প্রিমিয়ার করবনা। তবে মুক্তির আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে বসব। আমার মনে হয় সাংবাদিকদেরও ভালো-মন্দ নিজেদের ব্যবস্থায় দেখে লেখা উচিত। প্রিমিয়ারে এক ধরণের ভালো না হলেও ভালো লেখার দায়বদ্ধতা তৈরী হয় বলে মনে করি।

আপনার সিনেমার পাশে ‘বিজলী’ নামে আরেকটি বড় বাজেটের সিনেমা রিলিজ হচ্ছে। কিছু বলবেন?
বিজলীকে অভিনন্দন। আমার সিনেমার ধরণ আলাদা। বিজলী’র ধরণ ভিন্ন। আমার সিনেমা মুক্তির লক্ষ্য ৫০টির মত সিনেমা হল। বাকী সিনেমাহলেও তো সিনেমা দরকার। নতুবা ইন্ডাস্ট্রি বাঁচবে কি করে? প্রযোজক-সিনেমা হল বাঁচলে সিনেমা বাঁচবে। তবে আমি জানতাম প্রযোজক সমিতি সূত্রে, ৩০ মার্চ  ‘বিজলী’ আসবে। হয়ত তারা নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়েছে। তারপরও তাদের অভিনন্দন!

ফিচার ছবি: তানভীর আশিক