মন্ত্রীদের অতিকথন, স্তুতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্ভরতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।কেউ বলে এদেশের মন্ত্রীদের কাছ থেকে বিদেশের মন্ত্রীরাও পরামর্শ নিয়ে থাকে। কেউ বলে এদেশে কোন মানুষ না খেয়ে নেই। কেউ বলে দ্রব্য মূল বেড়েছেতো কী হয়েছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও বেড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশটাকে চালাচ্ছে মন্ত্রীসভা নয় চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সাথে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘাত হয়েছে। সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে দুজন মানুষ। আহত হয়েছে অনেক। এসব বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে শিক্ষামন্ত্রীর কি কোন ভূমিকা ছিলো? রক্ত ঝরলো। মানুষ মরলো। এরপর শিক্ষা মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আহতদের দেখতে গেলো। করোনায় বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের এতে শিক্ষার চরম ক্ষতি হয়েছে। দীর্ঘদিন পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলো। আর একটি সংঘাতের অজুহাতে তা বন্ধ করে দেয়া হলো। কলেজ কর্তৃপক্ষ কি এই বন্ধ ঘোষনায় শিক্ষা মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়েছিল? নাকি অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো? আর তেমনটি হয়ে থাকলে শিক্ষামন্ত্রীর কাজটা কী। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর ভাইয়ের নামে সরকারী জমি দখলের মামলা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ সত্য হলে সেটাও কি শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতার জোরে নয় কি? দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের অনুদান দিচ্ছে ভূমিদস্যু ধনকুবেররা। সংঘর্ষে নিহত পথচারীর পরিবারকে সাহায্য দিচ্ছে ভূমিদস্যু ধনকুবেররা। এসব কি এদেশের সরকার ও মন্ত্রীসভার ব্যর্থতা নয়?
স্বাস্থ্য দপ্তরে উপর হতে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। বালিশ কান্ড,পর্দা কান্ড,করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট কান্ড,কম্বল কান্ড,ভুয়া ডাক্তার কান্ড আরও কত কী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কি নূন্যতম কোন চেষ্টা করেছে এগুলো প্রতিরোধ করতে? যারা এসবে জড়িত তারা কি স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের যোগসাজশ ছাড়া এগুলো করতে পেরেছে? আর এসব যোগসাজশ প্রতিরোধ করাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরই দায়িত্ব ছিল নিশ্চয়ই। রাজধানীর কলাবাগানের তেতুল তলায় থানা ভবন নির্মান ও শিশুদের খেলার মাঠ রক্ষার ইস্যু আজ দেশ জুড়ে আলোচিত।সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে বিনা মামলায় কোন আইনে গ্রেফতার করলো পুলিশ। অথচ পুলিশের আইজিপি কিছুদিন আগে বলেছিলেন,বিনা ওয়ারেন্টে অথবা নোটিস না দিয়ে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। গ্রেফতারের সময় গ্রেফতারের কারন, গ্রেফতারকারী অফিসারের নাম, গ্রেফতারের সময় ও স্থান সম্পর্কিত একটি মেমো গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি ও তার পরিবারকে পুলিশ দিতে বাধ্য। সৈয়দা রত্না ও তার ছেলেকে গ্রেফতারের সময় পুলিশ কি আইজিপির এই নির্দেশনা মেনেছিল? কবি শেলি বলতেন, কবিরা হচ্ছে আইন ভঙ্গকারী আইনজ্ঞ। তবে কি এদেশের পুলিশও আইন ভঙ্গকারী আইনজ্ঞ হয়ে গেছেন?
পুলিশ প্রধানের নির্দেশনা না মানলে কি তা আচরন বিধি লংঘন নয়? তেতুল তলার খেলার মাঠের পক্ষে শিশুরা রাস্তায় নামলো। অভিভাবকরা রাস্তায় নামলো।তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলো। তবু কেন পুলিশ এসবের মাঝে থানা ভবনের দেয়াল তোলার কাজ শুরু করে দিল। কোন জেদের বশে?জনগণ খেলার মাঠের দাবীতে আন্দোলন করছে। আর পুলিশ তার বিরুদ্ধে দাড়ালো।এক্ষেত্রে পুলিশ নিশ্চয়ই জনগণের বেতনভুক্ত কর্মচারী জনগণ পুলিশের কর্মচারী নয়। তবে এটা কি মালিকের বিরুদ্ধে কর্মচারীর চরম স্বেচ্ছাচারিতা নয়? এত কিছুর পরেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোন পদক্ষেপ নিলেন না।একবার বলেন খেলার মাঠ থাকবে না থানা ভবন হবে তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আবার তিনি এ-ও বলেন তেঁতুল তলার মাঠ পুলিশের সম্পত্তি। এটা কিভাবে সম্ভব। পুলিশ হলো জনগণের জানমাল রক্ষার বেতন ভূক্ত কর্মচারী মাত্র। আর এই জানমাল রক্ষার জন্যই মালিক জনগণ তাদের বেতন দিচ্ছে। এখন মালিককে হটিয়ে কর্মচারী কী করে মালিকানা দাবী করে বসলো?খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এ মালিকানার পক্ষে সায় দিল। এখন আবার সুর পাল্টে বলছেন,তেতুল তলায় খেলার মাঠই থাকবে।কারন প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দিয়েছেন। এটাও যদি প্রধানমন্ত্রীকে করতে হয় তাহলে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী,সচিব ও কর্মকর্তা কর্মচারীর প্রয়োজনটা কী। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা না দিলে কি সেটা থানা ভবনের দেয়ালই হয়ে যেতোনা?
শুধু কি শিক্ষা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সফলতা কী। এদেশের আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারী করলো। সেটার সমাধান করতে না পেরে তিনি অপর আরেকটি দেশ ভারতের সহায়তা চাইলেন। বাংলাদেশের সংকট মিটাবে অন্য আরেকটি দেশ।বিষয়টা সমূহ লজ্জার নয় কি? যে কারনে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা জারী করলো সেটি যে ঠিক নয় কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা প্রমাণ করতে পারছেনা। না কি আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো তারা এনেছে তা সত্যি? আর সত্যি হলে তাদের শোধরানোর ব্যবস্থা করা হোক।দেশেতো তাও হচ্ছেনা। অথচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফাই গেয়ে চলছে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত কতিপয়ের। আইন শৃংখলা বাহিনীর এসব কতিপয় কারা? জনগণের বেতন ভূক্ত কর্মকর্তা কর্মচারী নয় কি? আর এমন বেতনভোগীদের জন্য কেন বিড়ম্বনা পোহাবে দেশ ও জনগণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি জবাব দিতে পারবে তার? কী কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়? দ্রব্যমূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। চলে যাচ্ছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
অথচ মন্ত্রী বলে চলছে দ্রব্যমূল্য বেড়েছেতো কী হয়েছে বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও। কিন্তু মানুষ কি বলে তা শুনে কে? পানি সম্পদ মন্ত্রী কী কাজ করছে। কৃষকের ফসল রক্ষার বাধ ভেঙ্গে ফসল তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। এসব বাধের জন্যে বরাদ্দকৃত টাকা চলে গেছে লুটেরাদের হাতে।কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে হাহাকার। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয় রয়েছে।কৃষকের কল্যাণে এই মন্ত্রণালয় কতটা কাজ করছে। ত্রান,দূর্যোগ,সমাজসেবা,স্থানীয় সরকার ও সড়ক পরিবহন কত মন্ত্রণালয় ও কত মন্ত্রী। অথচ চলছে ত্রান সামগ্রী আত্মসাৎ, প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়ে অনিয়ম, সড়কে অনিয়ম ও দুর্নীতি।জনগণের এসব ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নে দায়িত্ব নেবে কে? মালিকের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব কি বেতন ভোগী কর্মচারীর নয়?
মন্ত্রীরা সব সিদ্ধান্ত নেয় প্রধানমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে।নিজেরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কিছুই করতে চায়না। এভাবেই সরকারকে মন্ত্রীসভার না করে করে চলছে ব্যক্তিময়। এই ব্যক্তিময়তা সরকারের জন্য ও মন্ত্রীসভার জন্য নিশ্চয়ই শুভকর হতে পারেনা। আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র চলছে। এ অভিযোগ সত্যি হলে শত্রুদের টার্গেট দল, সরকার ও মন্ত্রীসভা নয়।টার্গেট কেবলই শেখ হাসিনা।সরকার চলবে কোন ব্যক্তির কথায় নয়। চলবে একটি সামষ্টিক চেইন অব কমান্ডে। এর ব্যর্থতা সফলতাও কোন ব্যক্তির নয় সেটাও সামষ্টিক। অথচ যাদের দায় নেয়ার কথা তারাও দায় এড়িয়ে দায়ের জোয়াল তুলে দিচ্ছে ব্যক্তির কাধে। অনেকের প্রশ্ন তিনি কি পারবেন এমন অসম্ভব ভারী জোয়াল কাধে এগিয়ে যেতে ও এগিয়ে নিতে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)