চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

একজন অধ্যাপকের ক্লাসে ফেরার আকুতি!

ড. রুশাদ ফরিদী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ২০১৭ সালের ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। সে বছরের জুলাই মাসের ১৯ তারিখ তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট মামলা করেন।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তারপরও কিছু জটিলতায় ক্লাসে ফিরতে পারেননি এই শিক্ষক।

ক্লাসের ফেরার আকুতি জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন বিভাগের চেয়ারম্যানের অফিসের সামনে।

সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুর থেকে আবারও দাঁড়িয়েছেন সেখানে। বলেছেন ক্লাসে ফিরতে না দেওয়া পর্যন্ত তার কর্মসূচি চলবে।

ঘটনাস্থল সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘আমি শিক্ষক আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন।’

সেখানে গিয়ে কথা হয় অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীর সাথে। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। এক সপ্তাহ পরই তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট মামলা করেন। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, ‘রায়টি পাওয়ার পর আমি সার্টিফাইড কপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সেই কপি হাইকোর্টের বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে পেতে সময় লাগবে।’

তাই উকিল সার্টিফিকেটসহ বাধ্যতামূলক ছুটি অবৈধ, হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভাগে যোগ দেওয়ার জন্য যান তিনি।

তখন বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে অধ্যাপক ফরিদী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমি যখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভাগে যোগ দিতে যাই তখন বিভাগের চেয়ারম্যান মহোদয় বলেন উনি এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে তাকে জানান তাহলেই তিনি কিছু করতে পারবেন।’

এ সময় বিভাগের চেয়ারম্যান তাকে বকাঝকা করেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি তাকে বলি, আপনি তো বিভাগের কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তখন উনি (বিভাগের চেয়ারম্যান) প্রচণ্ড রেগে যান। আমাকে বকাঝকা করে চলে যেতে বলেন। আর বলেন তার কক্ষে আর না আসতে।’

অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীর কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন অভিযোগে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তখন আমাকে শুধু একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয় বিভাগের কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে অভিযোগটা কী ছিল সেটা একেবারেই লেখা ছিল না। অভিযোগ সম্পর্কে আমি মামলা শুরু হওয়ার প্রায় এক বছর পর জেনেছি ‘

তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আমি নাকি বিভাগের শিক্ষকদের ফোন দিয়ে হুমকি দিয়েছি, তাদেরকে ভেড়ার পাল বলেছি, দুর্নীতিপরায়ণ বলেছি।’

তিনি সেগুলো বলেছিলেন কি না, জানতে চাইলে অস্বীকার করেন অধ্যাপক ফরিদী।

তবে তিনি বলেন, ‘আমি তখনকার বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমা বেগমকে বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে ৭টি চিঠি লিখি। এতে অনেক শিক্ষক আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হন।’

অধ্যাপক ফরিদী জানান, তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর ৫ দিন আগে (২০১৭ সালের ৭ জুলাই) একটি জাতীয় দৈনিকে তার একটি কলাম ছাপানো হয়। কলামটির শিরোনাম ছিল ‘উল্টোপথে কি শুধুই বাস’।

তিনি বলেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস নিয়মিত উল্টোদিকে চলত। তখন আমি সেই কলামে লিখেছিলাম এটা প্রতিকী চিত্র। আসলে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ই উল্টোপথে চলছে। তখনকার প্রশাসন এ বিষয় নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ‘

অধ্যাপক ফরিদী মনে করেন, এই সুযোগটিই তখন তার বিভাগের কিছু শিক্ষক নিয়েছিলেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ তো আমাদেরকে অবশ্যই মান্য করতে হবে। কোর্টের আদেশের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেলে আমরা পদক্ষেপ নেব।’