চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

একক অভিভাবক পুরুষ হলে সহানুভূতি, নারী হলে ‘পরিণতি’

গণমাধ্যমে সিঙ্গেল ফাদারকে উপস্থাপনে তার অবস্থা সহানুভূতির সঙ্গে বর্ণনা করা হলেও সিঙ্গেল মাদারের ক্ষেত্রে তেমনটি হয়না। সিঙ্গেল মাদারের ক্ষেত্রে তা বর্ণনা করা হয়, এ দুর্ভোগ যেন তার পরিনতি। সংবাদ প্রতিবেদনে এরকম ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয় নারী।

বুধবার ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত ‘জেন্ডার ইন জার্নালিজম: কনটেন্ট অ্যান্ড সেনসিভিলিটি’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে সংবাদ প্রতিবেদনে নারীকে হেয় করা আরও কিছু শব্দের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন।

ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত এ সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন: নারী এবং পুরুষ সম্পর্কে জনগণের উপলব্ধি তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই প্রতিবেদন তৈরির সময় এমন কিছু পরিহার করতে হবে, যা নারী-পুরুষকে তুচ্ছ করে তোলে।

জেন্ডার অসংবেদনলীল ভাষা কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তার কিছু উদাহরণ দিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষক বলেন: জেন্ডার ভিত্তিক পূর্ব ধারণা এবং গতানুগতিক ভাষা ব্যবহার করে নারী-পুরুষকে উপস্থাপন করা হয়। যেমন, কৃষক, শ্রমিক পুরুষ হবে এবং নারী হবে সেবিকা।

তিনি বলেন: বিজ্ঞাপনে নারী-পুরুষকে এমনভাবে উপস্থাপন করা উচিত নয়, যা গতানুগতিক জেন্ডার ধারণাকে উপস্থাপন করে। যেমন, গৃহস্থালি কাজকর্ম, রান্না বা পরিচ্ছন্নতা সংশ্লিষ্ট পণ্যে নারী, খাদ্য এবং বেভারেজ পণ্যের ক্ষেত্রে শিশু, পেশার ক্ষেত্রে নারীর জন্য শিক্ষকতা, চিকিৎসা, শিশুর যত্ন এবং পুরুষের জন্য ব্যাংকিং এবং বিনিয়োগ, রিয়েল এস্টেট, ক্রীড়া ইত্যাদি।

এছাড়া মিডিয়া হাউজের অভ্যন্তরে মালিকানা, ব্যবস্থাপনা, বোর্ড অবস্থান, নেতৃস্থানীয় পদগুলোতে জেন্ডার সমতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত উল্লেখ করে সহকর্মীদের মধ্যে জেন্ডার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্ব দেন অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং গণ-সাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন: জেন্ডার বলতে কেবল নারী এবং পুরুষ নয়; তৃতীয় লিঙ্গের কথাও ভাবতে হবে। দেশে বর্তমানে আট লাখ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে। তাই গণমাধ্যমে তাদের সঠিক উপস্থাপনও জরুরি।

গণমাধ্যমকে শুধু মুনাফা অর্জন নয় নৈতিকতার দিকেও নজর দিতে হবে মন্তব্য করে গণমাধ্যম গবেষণার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন এ গণশিক্ষা ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।

নিউজ কন্টেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখার দৃষ্টি পাল্টানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সংবাদ উপদেষ্টা কুররাতুল আইন তাহমিনা বলেন: সমাজের সব জায়গায় নারী-পুরুষ মিশে মিশে আছে। গঁৎখালীর ফুল চাষ আমরা রিপোর্ট করি। ফুল চাষ পুরুষ চাষী করে, বাজারেও পুরুষ চাষী আনে, কিন্তু পেছনে তো মেয়ে আছে। তাহলে আমরা দেখার ‍দৃষ্টি পাল্টাতে হবে এবং নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে আনতে হবে।

তবে মিডিয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীলতার উন্নতি ঘটছে উল্লেখ করে মাছরাঙা টিভির বার্তা প্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা বলেন: মিডিয়ায় এখনও যে জেন্ডার অসংবেদনলীল ভাষা ব্যবহার কিছুটা কমেছে। তবে এখনও যে ‘পরমা সুন্দরী’ শব্দ ব্যবহার করা হয় না তা নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি আরও উন্নতি ঘটানোর।

একুশে টিভির প্রধান নির্বাহি এবং সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং নিউজ২৪ এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নীর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহি পরিচালক শিপা হাফিজ, উন্নয়ন এবং জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসী সুলতানা, দেশ টিভির বার্তা সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, রাজশাহীর আঞ্চলিক দৈনিক সোনার দেশ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিনসহ অন্যরা।

স্বাগত বক্তব্য দেন এমআরডিআই’র নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।