চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

এই মৃত্যুর দায় কে নেবে?

গতরাতে প্রিয় নাতনি শেহরীন মাহমুদ সাদিয়ার মরদেহ পাওয়ার পর থেকেই বুক চাপড়ে ক্রমাগত বিলাপ করে যাচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব হাজী জামাল। কোনো কিছুতেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। তার কণ্ঠে শুধুই নাতনিকে না বাঁচাতে পারার আফসোস। অনুশোচনায় বারবার কেঁদে উঠছেন তিনি। তারই হাত ধরে হাঁটতে থাকা আদরের মানুষটিকে শেষ পর্যন্ত খুঁজে পেলেন, তবে প্রাণহীন শরীরে।

সাদিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (আইআইইউসি) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্রী। চশমা কিনে গতকাল রাতে নানা এবং মামাকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু পা পিছলে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি নালায় পড়ে যান। কয়েকঘণ্টা চেষ্টার পর তার মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

বৃদ্ধ হাজী জামাল হয়তো অনুশোচনায় এই মৃত্যুতে নিজেকে দায়ী করছেন। হয়তো ভাবছেন, সাদিয়াকে বাঁচানোর দায়িত্ব ছিল তারই। কিন্তু প্রকৃতই কি তাই? অনেকের প্রশ্ন এই মৃত্যুতে আসলে দায়ী কে? চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)? নাকি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ)? অথবা অন্য কোনো সংস্থার?

আমরা জানি, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা, বছরের পর বছর ধরে চলা সমাধানহীন এক সমস্যা। এর জন্য বহু নেতা বহুবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। বরং অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেকে নির্দোষ রাখার অপচেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে আবার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধারাবাহিক সমন্বয়হীনতায় একে অন্যের ওপর দায় চাপাচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ।

মূলত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। আর সেই কাজ করতে গিয়ে বহু স্থানে নালার ওপর থাকা রেলিং, স্ল্যাবও এবং অন্যসব নিরাপত্তা বেস্টনি ভেঙে ফেলা হয়েছে। যে কারণে সেই স্থানগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। যার নির্মম বলি সাদিয়ার মতো মেধাবীরা। অথচ মানুষের চলাচলের সেই পথ নিরাপদ রাখা যেত। কিন্তু তারা নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষা করে গেছেন।

শুধু সাদিয়া কেন? গতমাসেই মুরাদপুর এলাকার চশমাখালে তলিয়ে যাওয়া সবজিবিক্রেতা ছালেহ আহমেদ (৫০) আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার আগে গত ৩০ জুন মেয়র গলিতে ওই খালে পড়ে মারা যায় এক সিএনজি চালক এবং এক যাত্রী। একের পর এক এমন করুণ মৃত্যুতেও কোনো কর্তপক্ষেরই টনক নড়েনি। প্রথম ঘটনার পর সাবধান হলে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হতো না।

আমরা মনে করি, সাদিয়া-সহ অন্য যারা খালে পড়ে মারা গেছেন, সেসব মৃত্যু কোনো না কোনো কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলারই ফল। যে সেই হোক না কেন- এই দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই।