এই মুহুর্ত থেকে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে বলে আশা প্রকাশ করে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আশার কথা, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
‘‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনকারী আমাদের গর্ব সেনাবাহিনী বিশ্বব্যাপী শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে সে ভূমিকাই প্রত্যাশা করে।’’
সোমবার বিকেলে পুরনো পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি৷
ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশব্যাপী সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির কঠিন দায়িত্ব সেনাবাহিনীর উপর ন্যস্ত। দেশে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে নীলনকশা চলছে, সেটা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী ও শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর এটা হবে আত্মঘাতী। এমনটা হলে দেশ ও জাতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এই মুহূর্তে দেশবাসীর পাশে দাঁড়াবে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী নামার পরও আজকে বিভিন্ন দিকে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এই অবস্থায় কি বলবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকে সেনাবাহিনী নেমেছে। এরপরও কয়েকটি জায়গায় হামলা হয়েছে। এটা অপ্রত্যাশিত। আমরা আশা করছি সেনাবাহিনী অতীতের মতো নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, চলমান নির্বাচনী প্রচারণার আগেই চিহ্নিত একটি মহল নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। বল প্রয়োগের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের প্রচার কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। শুরু থেকেই বিরোধী দলীয় প্রার্থীরা নির্বিচারে সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হচ্ছেন প্রায় প্রতিনিয়ত।
‘‘সরকারি দল, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, আইন-আদালত সবকিছুই যেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিপক্ষ। প্রচার কাজে হেন বাধা নেই, যা করা হচ্ছে না। চতুর্মুখী আক্রমণ মোকাবিলা করেই ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মাটি কামড়ে নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্ট তো বেশি কিছু চায় না, তারা চায় স্বাধীন দেশের নাগরিকরা নিরাপদে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিক। এ পরিবেশ যারা চায় না, তারাই বিভিন্নভাবে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী, নেতা-কর্মী-সমর্থকদের প্রতিপক্ষ শুধু নয়, জনগণের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
ড. কামাল হোসেন প্রশ্ন রেখে বলেন, এমনটা আর কত? আর কত এ দেশের মানুষকে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে! এমনটা আর চলতে দেওয়া যায় না। আসুন, আমরা যার যার অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়াই ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। বিশেষ করে ছাত্র, যুবসমাজ ও গণতন্ত্র-প্রিয় মানুষ মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে এগিয়ে নিই।
তিনি বলেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে পরিবর্তনের পক্ষে৷ জনগণ গণ বিরোধী শক্তিকে সবসময় পরাজিত করেছে। ইনশাল্লাহ ৩০ ডিসেম্বর আমরা রায় পাবো৷ ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে। আমরা আশা করবো জনগণের সবার স্বার্থ দেখে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে দেশে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এতে আরো বলা হয়, একদিকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে দেয়া হচ্ছে না৷ অপরদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষক আসতে দেয়া হচ্ছে না। জাতিংসঘের মানবাধিকার সংস্থা দেশের চললমান বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ নির্বাচন কমিশন চলমান নৈরাজ্যের দায় এড়াতে পারে না৷
এতো কিছুর পর ঐক্যফ্রন্ট কি নির্বাচন করবে এমন প্রশ্নে কামাল হোসেন বলেন, যেকোনো কঠিন মুহূর্তেও আমরা নির্বাচনে থাকবো ইনশাআল্লাহ৷
এ সময় সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে তামাশায় পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।