বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে গত জুলাই মাসে ৮৩টি নারী নির্যাতনের ঘটনার বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও সিলেটে শিশু রাজন এবং খুলনায় রাকিবকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নিযার্তনের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
হঠাৎ করে এসব ঘটনায় যেমন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে; তেমনি বহি:র্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সমাজিকভাবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।
অভিযোগ রয়েছে এসব ঘটনায় জড়িতদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় মানুষের আশ্রয় একমাত্র সামাজিক আন্দোলন। সমাজে শিশু বিদ্বেষের বর্ণনা দেওয়ার আগে নারী বিদ্বেষের একটা ঘটনা বলা খুবই জরুরি মনে করছি।
কয়েকদিন আগে রাতে বাসে করে মৌচাক থেকে গুলিস্তান যাচ্ছিলাম। তখন সময় আনুমানিক ৭ থেকে সাড়ে ৭টা। বাসে খুবই ভিড় আর চাপাচাপি অবস্থা। দুইজন কর্মজীবী মহিলা বাসে উঠবেন বলে হাত বাড়ালেন। এরইমধ্যে আমার সামনেই দাড়িওয়ালা এক পুলিশ কনস্টেবল বলে উঠলেন, মহিলাদের নিয়ে যতো সমস্যা। কি দরকার চাকরি করার? চাকরি না করে বাসায় থাকলেই তো এতো ঝামেলা করতে হয় না। এতো রাতে বাইরে ঘুরবে আর অঘটন ঘটলে সব দোষ নন্দ ঘোষ।
লোকটার কথা শুনে বুঝতে পারলাম তিনি একজন নারী বিদ্বেষী মৌলবাদী। তার কথাবার্তায় মনে হয়নি তিনি সভ্য প্রকৃতির মানুষ। এভাবে ভরা বাসে কোনো মহিলা সম্পর্কে যিনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন তাকে সভ্য বলাটা উচিত নয়।
এই রকম নারী বিদ্বেষী রোগ শুধু এই দাড়িওয়ালা লোকটিরই নয়। এ রোগ আমার-আপনার মধ্যেও রয়েছে। শুধু পার্থক্য হলো কেউ প্রকাশ করে আর কেউ করে না।
পুলিশ কনস্টেবলের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি অঘটন বলতে যৌন নিপীড়নের কথাই বলেছেন। মহিলারা চাকরি না করলেই কি যৌন নিপীড়ন বন্ধ হয়ে যাবে? মহিলারা চাকরি না করলেই এই সমস্যার সমাধান হবে? না, তা হবে না।
এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হবে; ততক্ষণ দেশে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। না হলে শুধু রাষ্ট্রের দুই বা তিনটি বড় পদে মহিলা থাকলেই দেশ নারীবান্ধব হয়ে যাবে না।
তবে এ কথাও স্বীকার করতে হবে পুরুষও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে তার মাত্রা খুবই নগন্য। তবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলে কেউই নির্যাতিত হবে না।
এবার আসি শিশু প্রশ্নে। শিশুর জন্মের পর তার শৈশবের ৪ বছর কাটে মা-বাবার নিবিড় পর্যাবেক্ষণে। আর ৫ বছর থেকে মা-বাবার পাশাপাশি স্কুলেরও শিক্ষক-শিক্ষিকার ওপরও কিছু দায়িত্ব বর্তায়।
শিশুরা সব সময়ই আদর-স্নেহের মধ্যে থাকতে বেশি পছন্দ করে। তারা শাসন একেবারেই পছন্দ করে না।
তবে আমাদের সমাজে এখন আদর-স্নেহের চেয়ে শিশুদের ওপর নির্যাতনই বেশি হচ্ছে। সেটা মানসিক এবং শারীরিক দুইভাবেই।
মানসিক নির্যাতন হলো শিশুর মনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা। আর শারীরিক নির্যাতন গত কিছুদিন ধরে রাজন আর রাকিবের নির্যাতনের কাহিনী আমরা সবাই জানি।
পত্রিকার পাতা খুলে নির্যাতন কাহিনী পড়ে হায় আল্লাহ!!! হায় আল্লাহ !! না করে সচেতন হউন। নারী এবং শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসুন। সমাজে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে এগিয়ে চলাই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক।
এস.এম. হৃদয় রহমান, শিক্ষার্থী, (অনার্স) ১ম বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ, ঢাকা কলেজ।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের
নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে
প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)