বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ আগস্টের পর আরেকটি বর্বরোচিত ঘটনার সাক্ষী ২১ আগস্ট। এই দিনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী। ভয়াল সেই দিনটির ১৫তম বার্ষিকী আজ। নারকীয় ওই হামলা দেশের রাজনীতির চিত্র পাল্টে দিয়ে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
২১ আগস্টে ঘটনাস্থলে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে মিছিল করতে চেয়েছিলো তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মিছিল শুরুর আগে বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আয়োজিত সমাবেশে ট্রাকের ওপর করা অস্থায়ী মঞ্চে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য তখন শেষের দিকে। হঠাৎই রাজপথে গর্জে ওঠে যুদ্ধক্ষেত্রের গ্রেনেড। স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন-রক্তাক্ত হয় হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শুধু গ্রেনেড নিক্ষেপ নয়, চলতে থাকে গুলিও।
শেখ হাসিনাকে হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করা ওই হামলার উদ্দেশ্য ছিল বলে ধারণা করা হয়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়ে ১০ অক্টোবর ২০১৮ সালে রায় দেন বিচারিক আদালত। আইনী বিভিন্ন পদক্ষেপের পরে এই রায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে যুক্তি আর আদর্শের লড়াই স্বাভাবিক, কিন্তু প্রতিপক্ষকে একেবারে নির্মূল করে দেয়ার মানসিকতায় ২১ আগস্টের ঘটনার পর দেশে অবিশ্বাস আর বিভেদের রাজনীতি জটিল আকার ধারণ করেছে বললে ভুল হবে না। সভা-সমাবেশ আর গণযোগাযোগে আততায়ী আর জঙ্গি হামলার আশঙ্কা স্থায়ী রূপ নিয়েছে এ ঘটনার পরে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের!
আমরা মনে করি, বোমা বা গ্রেনেড মেরে কাউকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভাষা হতে পারে না। দেশবাসী এই নারকীয় ঘটনার মামলার বিচারের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। এ ধরণের বর্বর ঘটনা যেনো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মাটিতে না ঘটে, তাও প্রত্যাশা সবার। দেশের গণতন্ত্র বিকাশের জন্য নিরাপদ সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা অবশ্যই প্রয়োজন। আমাদের আশাবাদ, ২১ আগস্টের ঘটনার মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চার পথ সুগম হবে।