দলীয় পরিচয়ে অপরাধ করা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে র্যাব-পুলিশের ‘অ্যাকশন’কে স্বাগত জানিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন। ছাত্রলীগ সভাপতি বলেছেন, সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তাদেরকে এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করে বলে দেওয়া হয়েছে, অপরাধীদের বিষয়ে কারো দলীয় পরিচয় দেখা হবে না।
আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, বন্দুকযুদ্ধে নিহত নেতা-কর্মীরা কোনো দলের নয়। জনগণের নিরাপত্তার জন্য যা প্রয়োজন, সরকার তাই করবে।
রাজধানীর হাজারীবাগ এবং মাগুরায় র্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে সোমবার রাতে নিহত হন হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু মিয়া এবং মাগুরা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান ওরফে আজিবর শেখ। পরের রাতে কুষ্টিয়ায় ডিবি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সরকারি দলের কয়েকজনের প্রশ্রয়ে থাকা জাকির হোসেন নিহত হন।
এরকম ঘটনায় সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক না কেনো, কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে পরিস্কার জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। অপরাধীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
তবে হাজারীবাগের ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
হাজারীবাগ থানা আওয়ামী লীগ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনার জন্য র্যাবকে দায়ী করেছে।
কয়েকদিনে বন্দুকযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগনের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব।
‘সরকার তাই সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করতে যা করার প্রয়োজন তাই করবে,’ বলে মন্তব্য করেন পংকজ দেবনাথ।
বন্দুকযুদ্ধে ছাত্রলীগের একাধিক নেতা নিহত হওয়ার ঘটনা সর্ম্পকে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, অপরাধ যারা করে তারা কোনো দলের না। তাদেরকে অপরাধী হিসেবেই দেখতে হবে। অপরাধীর কোনো দল থাকতে পারে না।
‘যে অপরাধ করবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাদের তাই বলেছেন,’ বলে জানান সাইফুর রহমান সোহাগ।
ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি বলেন: নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে বলতে চাই, কেউ কোনো অপরাধ করলে তাদের বিরুদ্ধে স্টেপ বাই স্টেপ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘আমরা দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে না পারলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেবো,’ বলে তিনি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দেন।
ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনা সর্ম্পকে তিনি বলেন, আইনের ব্যাপারে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তবে কোনো অনাকাঙ্খিত মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়
হঠাৎ করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা টার্গেট হলেও এলিট ফোর্স র্যাব অবশ্য বলছে তারা কোনো দলীয় পরিচয় দেখছে না। নেতাদের মতো তারাও বলেছে, অপরাধীদের কোনো দল নেই; সন্ত্রাসী ধরতে অভিযান চলবে।
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সন্ত্রাসী সন্ত্রাসীই। এদের কোনো দল নেই। যারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে এবং যারা অপরাধ করবে তাদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান চলবেই।
বর্তমানে র্যাব কি সরকারি দলের অপরাধীদের বিষয়ে হার্ড লাইনে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, র্যাবের বর্তমান অভিযান চলমান অভিযানেরই অংশ। আপনারা জানেন র্যাবের সৃষ্টিই হয়েছিল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, র্যাব কখনোই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটায় না। সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলে, কিন্ত কখনো কখনো অভিযানের সময় সন্ত্রাসীরা র্যাবের ওপর গুলি চালায়। তখন র্যাবও আত্নরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হয়।