আর কিছুটা দেরি করলেই হয়তো থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং নাং নন গুহা থেকে ১২ ক্ষুদে ফুটবলার আর তাদের কোচকে উদ্ধার অভিযান আনন্দের বদলে ভয়ঙ্কর শোকের হতে পারত।
কেননা কোচকে উদ্ধার করে আনার ক’ঘণ্টা পরই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেচ পাম্প। গুহার ভেতর খুব দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল পানির উচ্চতা।
অভিযান শেষ হওয়ার পর এই ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছেন ডুবুরিরা।
উদ্ধার কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুসারে গার্ডিয়ান জানায়, মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালিয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক দ্রুতই কোচসহ শেষ ৫ জনকে গুহা থেকে বের করে আনেন অভিজ্ঞ ডুবুরিরা। এরপর ডুবুরি ও উদ্ধারকর্মীরা আবার ঢোকেন ভেতরে থাকা সরঞ্জাম খুলে আনার জন্য।
তখনো গুহার প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীর দল। এমন সময় হঠাৎ করেই ভেতর থেকে একটানা পানি বের করে আনার কাজে ব্যবহৃত মূল পাম্পগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
‘চেম্বার থ্রি’ নামে ডুবুরিদের রেসকিউ বেস হিসেবে ব্যবহৃত গুহার ভেতরের একটি অংশে ওই সময় ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তিন ডুবুরি। হঠাৎ তারা গুহার ভেতর থেকে অনেক মানুষের চিৎকার শুনতে পান। তাকিয়ে দেখেন ভেতরে অন্ধকারের মধ্য থেকে মাথায় হেডলাইট পরা বেশ কয়েকজন উদ্ধারকর্মী ছুটে বেরিয়ে আসছেন।
মন্তব্য করার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই তিন ডুবুরির একজন গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘লোকজন ভেতরে চিৎকার করছিল কারণ মূল সেচ পাম্পগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ভেতরে পানি বাড়তে শুরু করেছিল। এতগুলো হেডলাইট একসাথে ছুটে আসছিল। সঙ্গে আসছিল পানি। পানি লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছিল।’
এক ঘণ্টারও কম সময়ে পাগলের মতো গুহা থেকে বেরিয়ে আসেন শতাধিক উদ্ধারকর্মী ও ডুবুরি। এদের মধ্যে থাই নেভি সিলের ওই তিন ডুবুরি আর চিকিৎসকও ছিলেন, যারা গত প্রায় পুরোটা সপ্তাহ গুহার ভেতরে বন্দী ফুটবল টিম ও তাদের কোচের সঙ্গে একটানা ছিলেন।
গত ২৩ জুন থেকে এ পর্যন্ত থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই শহরের ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি এলাকার থাম লুয়াং নাং নন গুহায় আটকা পড়ে ছিলো ১২ কিশোর ফুটবলার আর তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচের দলটি।
টানা ৯ দিনের চেষ্টায় তাদের কাছে পৌঁছানোর পর আরও ৬ দিন পর দলটিকে বের করে আনাতে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করে উদ্ধার কর্তৃপক্ষ। প্রথমে আরও অপেক্ষা করার পরিকল্পনা থাকলেও আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত অভিযান শুরু করা হয়।
চরম ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান শেষে তিন দফায় রবি, সোম ও মঙ্গলবার তরুণ কোচ ও ১২ কিশোর ফুটবলারকে গুহা থেকে নিরাপদে বের করে আনতে সফল হন উদ্ধারকর্মীরা।