নেপালে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পর উদ্ধারকারীদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনার পর উদ্ধার কাজে নিয়োজিত কর্মীদের একজন দাবি করেছেন, আগুন ধরে যাওয়ার পর হতাহতদের উদ্ধারে উপযুক্ত পোশাকের অভাব ছিল।
এমন দাবির পর প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি উদ্ধার তৎপরতা আরো জোরালো হলে বাঁচানো যেতো আরো কিছু প্রাণ?
এছাড়া লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে নেপালের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনার ঘাটতি, বিশেষ করে তাদের প্রশিক্ষণ ও পোশাকের অভাব এসব প্রশ্ন সামনে এসেছে।
উদ্ধারকাজে নিয়োজিত দমকলবাহিনীর একজন দি হিমালয়ান টাইমসকে বলেছেন, উপযুক্ত পোশাকের অভাবেই আমরা জ্বলন্ত আগুনের ভেতরে এবং উড়োজাহাজের কাছে যেতে পারিনি।
‘এ ধরনের বিপজ্জনক অবস্থায় যা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ছিল। যদিও দুর্ঘটনার তিন মিনিটের মধ্যেই অগ্নিনির্বাপক ফোম নিয়ে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।’
তিনি বলেন, আমরা আধাঘণ্টা ধরে দগদগে আগুনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু যথপোযুক্ত পোশাক না থাকায় আমরা তা করতে পারিনি। যেখানে আগুন ছিল না সেখান থেকেই ২২ জনের বেশিরভাগকে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরেকজন উদ্ধারকারী বলেন, যেসব যাত্রী আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছেন আমরা তাদেরকেই বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি।
ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের একজন চিকিৎসক যিনি মরদেহের ময়নাতদন্ত করছেন তিনি বলেন, নিহতদের বেশিরভাগই বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মারা গেছেন। যারা বেঁচে আছেন তারাও এর উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিতে আছেন।
দমকলকর্মীদের আগুনের কাছে যাওয়ার মতো পোশাক দেয়া হয়েছিল দাবি করলেও নেপাল সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, ওই পোশাক নিয়ে দগদগে জ্বলন্ত এলাকায় ঢোকার মতো ছিল না। সে ধরনের পোশাক দেয়া হলে হয়তো আরো কিছু জীবন বাঁচাতে পারতেন উদ্ধারকারীরা।
অবশ্য নেপালের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানিয়েছে, দুপুর ২টা ২৮ মিনিটে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয় এবং দ্রুত আগুন ধরে যায়। ৩টার সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আর পৌণে ৬টার মধ্যে সবাইকে (জীবিত/মৃত) উদ্ধার করা হয়।
নেপালের একজন পাইলটও উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ৯ম ক্যাটাগরির উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণকারীর সনদ পাওয়া এই বিমানবন্দরে ৫ম ক্যাটাগরির একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত এবং উদ্ধার তৎপরতার দীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
গত সোমবার ইউএস বাংলার একটি উড়োজাহাজ ঢাকা থেকে ছেড়ে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়।
এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫১। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৩ জন নেপালি, ১ জন মালদ্বীপের এবং ১ জন চীনা নাগরিক।
দুর্ঘটনার সময় উড়োজাহাজটিতে ৬৭ জন আরোহী ছিলেন, যাদের মধ্যে ৩২ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন মালদ্বীপের এবং একজন চীনের নাগরিক। এছাড়াও ৪ জন বাংলাদেশি ক্রু ছিলেন বিএস-২২১ ফ্লাইটে।