পরীক্ষার খাতা দেখায় অবহেলার শাস্তি কী হতে পারে? পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার আর এমপিওভুক্তি স্থগিত। এটা করলেই কি অবহেলার শাস্তি পেয়ে গেলেন একজন শিক্ষক?
সম্প্রতি জাতীয় একটি দৈনিকে এরকম প্রতিবেদন দেখে বিস্ময় জেগেছে অভিভাবক মহলে। যে শিক্ষার্থী দশ বছর পরিশ্রম করে, কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল, তার উত্তরপত্রটি যদি একজন শিক্ষক যথাযথভাবে না দেখে অবহেলা করে, তার খেসারত তো ওই শিক্ষার্থীকেই দিতে হবে সারাজীবন। বাবা-মার কাছে বকুনি খাওয়া থেকে শুরু করে বন্ধু আর আত্মীয়স্বজনের কাছে খারাপ ছাত্র হিসেবে পরিচিত হবে। এর জন্য কি ওই শিক্ষকের দায়িত্বহীনতার শাস্তি কঠোর হওয়া প্রয়োজন না?
ওই প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখায় অবহেলার অভিযোগে ৭২ শিক্ষককে গত ৪ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এর জবাব সন্তোষজনক না হলে পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার এবং এমপিওভুক্তি স্থগিত হতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখেছেন, এমন কিছু শিক্ষকও এ ধরণের নোটিশ পাবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায়ও এমন অবহেলার প্রমাণ মিলেছে।
কি ভয়ঙ্কর তথ্য! এটা শুধু ঢাকা বোর্ডের অবহেলার নমুনা। দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও যে এরকম ঘটনা ঘটেনি, তাই বা কে হলফ করে বলতে পারে? আর এই ভুল আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে কত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত জীবন যে নষ্ট হয়েছে তার হিসাব কে জানে? একজন শিক্ষক যদি গড়ে তিনশ’ করে খাতা দেখেন তা হলে ওই নোটিশ পাওয়া ৭২ জন শিক্ষক একুশ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ক্ষতি করেছে। আর সেই ক্ষতির কারণ পরবর্তী শিক্ষাজীবনেও পড়বে, এটা স্বাভাবিক।
এমনও জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষকরা বলেছেন তাদেরকে খাতা দেখার জন্য খুবই কম সময় দেওয়া হয়, এজন্য ভুলত্রুটি থেকে যায়। কতটা হাস্যকর যুক্তি দেখিয়েছেন। কম সময়ের জন্য যাচ্ছেতাইভাবে তারা খাতা দেখবেন?
আমরা আশা করবো অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এর ফলে ভবিষ্যতে অন্য শিক্ষকেরা আর দায়িত্বে অবহেলার করতে সাহস পাবে না। কারণ যে শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা খুবই সাধারণ। পরীক্ষার খাতা দেখে কিছু টাকা পাওয়া যেত, সেটা আর পাবে না; এটা এমন বড় কোন শাস্তি না। আরেকটি বিষয়, অভিযুক্ত শিক্ষকের এমপিওভুক্তি স্থগিত করা হবে, এটা আপাতত শাস্তি। কিন্তু এখানে শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে সরকারের লেজুড়বৃত্তি করা শক্তিশালী জোট। যারা আন্দোলন করে ওই ঠুনকো শাস্তি মওকুফ করতেও পিছপা হবে না। পাশাপাশি তদবির আর ধরাধরি করে ওই স্থগিত বিষয়টিকে আপোষরফা করে ফেলতেও বেশি কষ্ট হবে না।
শিক্ষা বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের কাছে অনুরোধ থাকবে প্রয়োজনে পরীক্ষার খাতা দেখার জন্য শিক্ষকের সংখ্যা বাড়িয়ে একেকজনকে কম খাতা দিয়ে মূল্যায়ন করা হোক। প্রয়োজন নেই একজন শিক্ষককে তিন’শ করে খাতা দেখার। কম করে দিয়ে শিক্ষক বাড়িয়ে খাতার মূল্যায়ন করা গেলে ঝুঁকি কিছুটা কমবে বলে মনে হয়।
আমরা চাই না আর কোনো শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট হোক। ভালো পরীক্ষা দিয়ে তারা মেধার সঠিক যাচাইয়ের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করুক। বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করবে প্রতিটি মেধাবী শিক্ষার্থী আগামীতে, এই আশা আমাদের সবার।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)