দুই মাস ধরে প্রায় সব ধরনের সবজির কেজি ৬০ টাকার আশপাশে বিক্রি হচ্ছে। কোনটির দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি। কিছু শীতকালীন সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম চড়া। সবজির এই চড়া দামের মধ্যে নতুন করে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের এই উচ্চমূল্য ভোক্তা সাধারণকে ভীষণ বিপাকে ফেলেছে।
পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা, রসুন ২০ টাকা এবং আদার দাম ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া সব ধরনের সবজির দামও আকাশচুম্বি। গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে ও টিসিবির বাজার দর পর্যালোচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের এই তথ্য জানা গেছে।
কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে এসেছেন সামসুল ইসলাম। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য ঢাকায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে। আয়ের সাথে ব্যয় মিলছে না। দুই মাসের বেশি সময় ধরে সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। ৬০ টাকার কমে কোনো সবজি পাওয়া যায় না। এখন নতুন করে ভোগান্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ ও আদা-রসুন।
তবে পণ্যের উচ্চ মূল্য সম্পর্কে বরাবরের মতেই কিছু খোঁড়া যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন: দীর্ঘমেয়াদি বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বিপুল পরিমাণ সবজি নষ্ট হয়েছে। বন্যার কারণে নতুন করে সবজি চাষ করা যাচ্ছে না। যেসব এলাকায় বন্যা হয়নি সেখানে অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সবজির। এসব কারণে দাম বাড়ছে।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। প্রায় দুই মাস ধরে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। ৩০ থেকে ৩৫ টাকার আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।
দফায় দফায় দাম বাড়ছে আদার। আমদানি করা আদার দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। তবে দেশি আদা ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
দাম বাড়ার এ তালিকায় রয়েছে রসুনও। ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে মসলাজাতীয় এই পণ্যটির। বর্তমানে দেশি রসুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা আর আমদানি করা রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পেঁয়াজ, আদা রসুনসহ কয়েকটি পণ্যের দাম যে বাড়ছে তা খোদ সরকারও জানিয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা-টিসিবির দৈনন্দিন বাজার তথ্যে দেখো গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় এসব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বাড়ছে কেন জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা সুমন বলেন, ঈদের পর অনেক দিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম ছিল। ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এখন চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে। ফলে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তবে সবজি বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে ব্রয়লার মুরগির দাম এখনো কম বলে মনে করেন এই বিক্রেতা।
কারওয়ান বাজারের আদা-রসুনের পাইকারি বিক্রেতা হাবিব জানান, দুই সপ্তাহ ধরে বাড়ছে আদার দাম। দেশি আদা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার অর্ধেকই নষ্ট। তাই আমদানি করা আদার দাম চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে প্রায় প্রতিদিনই আদার দাম বাড়ছে।
তিনি বলেন, আদার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ছে পেঁয়াজ ও রসুনের। তবে পেঁয়াজ রসুনের দাম বাড়ার কোনো যুক্তি দেখাতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে বলে জানান তারা।
বাজারে এখনও কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকার ওপরে। এছাড়া বাজারে শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, গাজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা, উস্তে ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পটল-কাঁকরোল ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাউ প্রতি পিস ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী দুলাল মিয়া বলেন, বন্যা ও বৃষ্টিতে সবজি উৎপান ব্যাহত হয়েছে। তাই সবজির দাম চড়া।