চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঈদ উপলক্ষে চাঙা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি

ঈদকে ঘিরে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। ফলে চাঙা হয়ে উঠেছে দেশের অর্থনীতি। আর এই অর্থ আসছে চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, গতিশীল অভ্যন্তরীণ বাজার, জাকাত ও ফিতরা থেকে। এ ছাড়াও অর্থের অন্যতম একটি উৎস রেমিট্যান্স।

ঈদের অর্থনীতি নিয়ে সরকারি কোনো গবেষণা না থাকলেও বেসরকারি গবেষণা অনুসারে ঈদ ও রমজানে অর্থনীতিতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত লেনদেন হয়। যার বড় অংশই চলে যায় গ্রামের দিকে। কারণ গ্রামমুখী চাকরিজীবী ছাড়াও যাকাত-ফিতরা দিতে বড় লোকেরা গ্রামে যান। এ কারণে ঈদে গ্রামের অর্থনীতি চাঙা হয়ে ওঠে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেশির ভাগ টাকা যাচ্ছে ভোগ-বিলাস খাতেই। তবে কিছু অংশ যাচ্ছে গ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্পভিত্তিক উৎপাদন খাতে।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রমজান ও ঈদের মতো উৎসব এলেই বাড়তি টাকার প্রবাহে সচল হয় গ্রামের অর্থনীতি। লেনদেন, বেচাকেনা বাড়ে।

তিনি বলেন, এ সময় নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকা যায়। এতে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। তবে বাড়তি টাকার প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, জাকাত ও ফিতরার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা, তৈরি পোশাকের ৩৫ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যের বাজার ২৫ হাজার কোটি এবং ঈদ বোনাস, পরিবহন ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ঈদ কেন্দ্রিক লেনদেন হয়। এ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ২৭ হাজার কোটি টাকার কিছু অংশ ঈদ কেন্দ্রিক লেনদেনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।

অভ্যন্তরীণ পোশাকের বাজার: ঈদ অর্থনীতির একটি বড় চালিকাশক্তি হচ্ছে পোশাকের বাজার। এ সময় দোকানগুলোয় পোশাকের বেচাকেনা তিন থেকে চারগুণ বেড়ে যায়।

ব্যবসায়ী নেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, এবার ঈদ কেন্দ্রিক কী পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, তার সঠিক তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে গত বছর ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো বিক্রি হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত বিক্রি পরিস্থিতি বেশ ভালো। আমার ধারণা, বিক্রির পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।

তিনি বলেন, যেকোনো উৎসবেরই কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে নতুন পোশাক। উৎসব আসলেই নতুন পোশাকের বিক্রি বেড়ে যায়। সারা বছর বিক্রি হয় ২০ শতাংশের মতো, বাকি ৮০ শতাংশ বিক্রি বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে। আর উৎসব কেন্দ্রিক যে বিক্রি, তার সিংহভাগই হয় রোজার ঈদে।

ভোগ্যপণ্যের বাজার: ঈদে সব ধরনের নিত্যপণ্যের চাহিদা বাড়ে। যেমন-ভোজ্য তেল, মাংস, চিনি, ডাল, সেমাই এবং পেঁয়াজ ইত্যাদি। ফলে এসব পণ্যের আমদানিও বাড়ে। আর আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব টাকার পাশাপাশি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেয়া হয়।

ব্যাংকিং খাত: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের সারা দেশে ১০ হাজার শাখা রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ শাখা প্রায় ৬ হাজার। এসব শাখায় গ্রামের আমানতের পরিমাণ ৩ লাখ কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে এই টাকার একটি অংশও গ্রামে খরচ হবে।

জাকাত: এফবিসিসিআই’র হিসাবে প্রতি বছর জাকাত ও ফিতরা বাবদ খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার সিংহভাগই গ্রাম এলাকায় যাচ্ছে।

রেমিট্যান্স: ঈদে বাড়তি খরচের জন্য প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ বা রেমিট্যান্স পাঠায়। এর বড় অংশই যাচ্ছে গ্রামে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ২৪ মে পর্যন্ত ১৩৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। ঈদ পর্যন্ত এটা আরো বাড়তে পারে।

বোনাস: এ বছর সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী অষ্টম বেতন কাঠামোর আলোকে ঈদ বোনাস পাচ্ছেন। এছাড়া পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রায় ৭০ লাখ কর্মীও বোনাস পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির হিসাবে দেশে ২০ লাখ দোকান, শপিংমল, বাণিজ্য বিতান রয়েছে। গড়ে একটি দোকানে ৩ জন করে ৬০ লাখ জনবল কাজ করছে। এদের বেতন-বোনাস দেয়া হয়।

এসব বেতন -বোনাসের প্রায় পুরোটাই যোগ হচ্ছে ঈদ অর্থনীতিতে।

সরকারি বরাদ্দ: চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ২৭ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। এসব অর্থ ব্যয় হচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তির অবসান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, এতিম শিশুদের জন্য বরাদ্দ, উপবৃত্তি, একটি বাড়ি একটি খামার, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা, কাবিটা ইত্যাদি খাতে। এই টাকার বড় অংশই ব্যয় হয় গ্রামে।

গ্রামীণ কুটিরশিল্প: রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোয় পণ্য উৎপাদন বেড়ে যায়। ঈদে এসবের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। ধুম বেচাকেনা হয়।