ঈদযাত্রায় এবছরে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা নৈরাজ্যকারী সিন্ডিকেটের পকেটে যাবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। ওই টাকার ৪০ শতাংশ চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট, বাকি ৬০ শতাংশ পরিবহন মালিক-শ্রমিক ও নেতাদের পকেটে যাবে বলে দাবি করেছে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
টাকার অংকের ওই হিসেব নিয়ে অনেকে দ্বিমত প্রকাশ করতেই পারেন। তবে ঈদযাত্রায় যারা বিভিন্ন গণপরিবহনে টিকেট করেছেন নয়তো ইতিমধ্যে গন্তব্যে পৌঁছেছেন তারা নিজেরাই বলতে পারবেন, কত শতাংশ ভাড়া তারা বেশি দিয়েছেন। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করতে পারছে না। মন্ত্রী থেকে শুরু করে পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আহ্বান-নির্দেশ নয়তো পরামর্শ দিলেও তা কাজে আসছে না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২৫ এপ্রিলের পর থেকে জেলাগুলোয় যাত্রাপথে বিভিন্ন বাসে যাত্রীপ্রতি ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নৌপথেও ভাড়া নৈরাজ্য চরমে ঠেকেছে। রেলে টিকিট কালোবাজারি, অনলাইনে টিকিট পেতে বিড়ম্বনা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার চরমে পৌঁছেছে। আকাশপথেও এহেন ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীসাধারণ এখন দিশেহারা।
ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকাতে মাঠে নেমেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম। তারা রাজধানীর নানা বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে ঘুরে জরিমান করছে। আজ (২৯ এপ্রিল) তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় ও ভাড়ার তালিকা কাউন্টারের সামনে না ঝুলানোয় পাঁচ পরিবহনকে জরিমানা করেছে। ৫০০ বা ১০০০ টাকার ওই জরিমানা আদায় পরিবহন মালিকদের গায়েই লাগছে না, কারণ ২/৩টি সিটের অতিরিক্ত ভাড়া থেকেই তাদের তা উসুল হয়ে যাচ্ছে!
করোনায় গেল ২ বছরে ঈদযাত্রায় বিধিনিষেধ থাকায় এবছর ঘরমুখী মানুষের চাপ বহু বেড়েছে। যেকোনো মূল্য নিজ জেলাতে বা গ্রামে ঈদ উদযাপনে যেতে লাখ লাখ মানুষ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন। চাহিদা ও যোগানের জটিল সমীকরণের সুযোগ নিচ্ছে নৈরাজ্যকারী সিন্ডিকেট। পরিবহনখাতে সরকারি সেবার চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে বেসরকারি উদ্যোগ, সেজন্য হুট করে কোনো শক্ত পদক্ষেপে যাওয়াও সরকারের জন্য কঠিন। এছাড়া সংসদ সদস্য থেকে শুরু পরিবহন খাতে তদারকির সাথে প্রত্যক্ষ জড়িতরা সরাসরি পরিবহন ব্যবসায় যুক্ত। ফলে অনেকসময় শুধু হালকা আহবান নয়তো লঘু জরিমানার মধ্যে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করতে হচ্ছে দায়িত্বশীলদের, আর ভোগান্তির শিকার হয়েই আসছে জনগণকে। এই অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই জরুরি, আমাদের আশাবাদ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।