দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বেহাল দশা। সারা বছর ঝিমিয়ে চললেও ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছুটা চাঙা হয় ঢাকাই সিনেমা। বছরে ঈদের দুটো উৎসবকে টার্গেট করে প্রযোজকরা বড় বাজি ধরেন। অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ বাজেটে নির্মিত হয় ঈদের সিনেমাগুলো। আসন্ন ঈদের জন্যও বিগ বাজেটে নির্মিত বিদ্রোহী, মিশন এক্সট্রিম, শান, বিক্ষোভ সিনেমাগুলো ছিল প্রায় নিশ্চিত ছিলো!
এছাড়া নবাব এল.এল.বি নামে আরও একটি বড় বাজেটের ছবির শুটিং শুরুর কথা ছিল। এর বাইরে শোনা গিয়েছিল ওস্তাদ, গাঙচিল, মন দেব মন নেব সিনেমাগুলোর কথাও! কিন্তু সব হিসেবে পাল্টে দিলো মহামারি করোনা!
মুক্তির সম্ভাব্য তালিকায় থাকা কোনো কোনো সিনেমার শুটিংও শেষ করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। আর যেগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তারা করোনাকালের এই মন্দা সময়ে বাণিজ্যিক দিক বিবেচনা করে ঈদে সিনেমা মুক্তি দিতে অনিচ্ছুক! তাই আসছে ঈদে প্রতীক্ষিত সিনেমাগুলোর ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে অন্তত এমনটাই জানালেন সিনেমাগুলোর প্রযোজক ও পরিচালকরা।
দেশের শীর্ষ চিত্রনায়ক শাকিব খান এবং চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী জুটির সিনেমা ‘বিদ্রোহী’ ঈদে মুক্তির জন্য আগেই সেন্সর ছাড়পত্র নিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। ছবির পরিচালক শাহীন সুমন। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও প্রযোজক সেলিম খান বলেন, গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত ৪৫টি সিনেমা হলে ঈদে ‘বিদ্রোহী’ মুক্তির জন্য বুকিং দিয়েছিলাম। কিন্তু করোনাভাইরাস সব হিসেব পাল্টে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিদ্রোহী’র বাজেট কয়েক কোটি টাকা। এতো বড় বাজেটের সিনেমা ঈদে মুক্তি ছাড়া নির্মাণ খরচ তোলাই কষ্টসাধ্য হবে। করোনার কারণে ঈদে মুক্তি দেওয়া যেহেতু সম্ভব হচ্ছে না, তাই দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে আবার মুক্তি নিয়ে চিন্তা করবো। সিনেমা যেহেতু পুরোপুরি তৈরি আছে তাই মুক্তিতে সমস্যা নেই। পরিস্থিতি ঠিক হলে বুঝেশুনে মুক্তি দেব।
গত বছর থেকে আলোচনার টেবিলে ছিল পুলিশি অ্যাকশন থ্রিলার ধাঁচের সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’। আগামি সাতদিনের মধ্যেও যদি ৮০ শতাংশ করোনামুক্ত হয় তারপরেও তারকাবহুল এ সিনেমাটি ঈদে মুক্তি দেবেন না বলে জানান পরিচালক সানী সানোয়ার।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে এখন নিরাপত্তাবোধ ব্যাপকভাবে কাজ করছে। আবার স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আসন্ন ঈদে সিনেমা মুক্তি দেয়া যাবে না এটা শতভাগ নিশ্চিত।
আলোচিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমার এই কাহিনি ও চিত্রনাট্যকার বলেন, সারাবিশ্বেই একই সমস্যা বিরাজমান। কবে পরিস্থিতি শান্ত হবে তার নিশ্চিত কোনো ব্যাখ্যা পাচ্ছি না। তাই পরিস্থিতি শান্ত না হলে নতুন করে প্ল্যানও করা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি থেকে সুস্থ হয়ে মানুষ আবার কবে সাইকোলজিক্যালি উৎফুল্ল হয়ে পাবলিক গ্যাদারিংয়ে আসবে তা ঠিক না হয়ে সিনেমা রিলিজ দিলে কোনো লাভ হবেনা।
রোজার ঈদে সিনেমাটি দেশে মুক্তি দিয়ে ১৫ দিন পরেই বিশ্বের অন্যান্য দেশে মুক্তির জন্য মোটামুটি সব ঠিকঠাক করা ছিল বলেও জানান তিনি। সানী সানোয়ার বলেন, এসব প্ল্যান ও বাতিল করতে হয়েছে। মিশন এক্সট্রিম দুই এপিসোডে নির্মিত। মুক্তি যখনই দেব বেশি গ্যাপে দেব না।
আড়াই কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে ঈদে মুক্তির টার্গেটে নির্মিত আজাদ খান প্রযোজিত সিনেমা ‘শান’। সিয়াম, তাসকিন, পূজা চেরীকে নিয়ে এ সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন এম রাহিম। করোনার কারণে শেষ মুহূর্তে এ সিনেমার কাজ আটকে যায়। পরিচালক জানান, এখনো একটি গানের শুটিং বাকি। করোনা বাগড়া না দিলে ঈদেই আসতো একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা শান।
‘শান’ সিনেমার পোস্ট প্রডাকশনের কাজে পরিচালক এম রাহিম গিয়েছিলেন কলকাতায়। সেখানেই আটকা পড়েছেন লকডাউনে। কলকাতা থেকে পরিচালক বলেন, খুব আশা ছিল দর্শকদের ঈদে গল্পনির্ভর অ্যাকশন সমৃদ্ধ সিনেমা উপহার দেব। শুধুমাত্র মহামারির জন্য হলো না। এ অবস্থায় পোস্ট প্রোডাকশনের কাজও শেষ হলো না। তাই পরে আবার নতুন তারিখ নির্ধারণ করে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেব।
এম রাহিম বলেন, আমাদের সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য আমরা একটা যুদ্ধ করে যাচ্ছি। আর এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মানুষকে আবার হলে ফেরানো চ্যালেঞ্জ হবে। বড় বাজেটের সিনেমাগুলো সবসময় একটু ঝুঁকিতে থাকে। তাই চেষ্টা করবো উৎসবেই ‘শান’ মুক্তি দেয়ার। আশা করবো, স্বাভাবিক দিন এলে দর্শকরাই আমাদের চলচ্চিত্র বাঁচাতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
বড় বাজেটে শান্ত খান ও শ্রাবন্তী অভিনীত এবং শামীম আহমেদ রনী পরিচালিত রাজধানীর সড়ক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্মিত সিনেমা ‘বিক্ষোভ’ মুক্তির কথা ছিল রোজার ঈদে। নির্মাতা বললেন, ‘বিক্ষোভ’ এ শুধু একটি রোমান্টিক গান বাকি ছিল। করোনার প্রকোপ দেখা না দিলে এপ্রিলের শুরুতেই শুটিং শেষ হতো। এখন যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এতে ঈদে বিক্ষোভ মুক্তি সম্ভব নয়। পরিস্থিতি যদি ঠিক হয় তবে ঈদুল আযহাতে ‘বিক্ষোভ’ মুক্তি দিতে চাই। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর।
এসব সিনেমার বাইরে সেলিব্রেটি প্রোডাকশনের ব্যানারে অনন্য মামুনের পরিচালনায় বড় বাজেটের আরেক সিনেমা ‘নবাব এল.এল.বি’র শুটিং হওয়ার কথা ছিল ২৮ মার্চ। শাকিব খান, মাহিয়া মাহি ও স্পর্শিয়ার এ সিনেমাটি নিয়ে পরিচালক বলেন, করোনা যুদ্ধে জয়ী হয়ে যদি বেঁচে থাকি অবশ্যই সিনেমাটি হবে। যখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, শুটিং পরিবেশ থাকবে তখনই কাজ শুরু করবো ‘নবাব এল.এল.বি’র।