উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের ই-কমার্স খাত। কিন্তু এই এগিয়ে যাওয়ার পথে এখনও রয়েছে অনেক বাধা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সঠিক নীতিমালার অভাব।
মঙ্গলবার এফবিসিসিআই সম্মেলনকক্ষে ‘ই-কমার্স অপরচুনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ মতামত উঠে আসে।
এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে এবং ফ্রেডরিখ নুউম্যান ফাউন্ডেশনের (এফএনএফ) সহায়তায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক এবং ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) পরামর্শক শমী কায়সার। এছাড়া এফএনএফের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. নাজমুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন ও বেসিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকনোমিক রিসার্চ প্ল্যাটফর্মের প্রকল্প পরিচালক নুহিন খান।
প্রতিবেদনে দেশের বর্তমান ই-কমার্স খাতের সাফল্য এবং ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে তিনি বলেন, তরুণ উদ্যোক্তারা ই-কমার্স খাতে ব্যাপকভাবে এগিয়ে এসেছে। ২০১৬ সালে এ খাতে লেনদেন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫শ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির প্রায় এক শতাংশ। তবে এই এগিয়ে যাওয়ার পথে এখনও রয়েছে অনেক বাধা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সঠিক নীতিমালার অভাব। এছাড়া ‘পেমেন্ট সিস্টেম, লজিস্টিকস, ডেলিভারি, হাই-স্পিড ইন্টারনেট, অর্থ পরিশোধে জটিলতা এবং নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
বেসিসের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ২২ শতাংশই অনলাইনে পণ্য ক্রয় করে থাকে। তবে ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী লোকেরাই অনলাইনে সবচেয়ে বেশি পণ্য কেনে। এ হার ৬১ শতাংশ। এছাড়া ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের ১৬ শতাংশ লোক অনলাইনে পণ্য কেনাবেচা করে।
ট্রেডিশনাল কোম্পানিগুলো অনলাইন কেনাবেচায় তেমন আগ্রহী নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইন ভিত্তিক নতুন কোম্পানি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু পুরাতন কোম্পানিগুলো এ ব্যবসায় তেমন আগ্রহী নয়, কারণ তারা মনে করে ক্রেতারা সাধারণত সরাসরি পণ্য দেখতে চায়, সরাসরি পণ্যের দাম যাচাই-বাছাই করে কিনতে চায়। এছাড়া দেশের অনলাইনে কেনাবেচা এখনও জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি বলে মনে করেন তারা।
অনলাইন ব্যবসাকে এগিয়ে নেয়ার কিছু পরামর্শও দেয়া হয় ওই প্রতিবেদনে। এর মধ্যে জেলা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড কানেকশন বিস্তৃত করা ও বিদ্যমান ব্যবসায়িক আইনে ই-কমার্সকে অন্তর্ভুক্ত করা, সঠিক ব্যবসায় নীতি প্রণয়ন করা ও নিরাপদে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাংকিংকে আরো প্রসারিত করার প্রতি জোর দিতে হবে। ই-কমার্সে সাধারণ মানুষের আস্থা তৈরি করতে এনক্রিপশন স্টান্ডার্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া পণ্য সরবরাহ সহজ করতে পোস্ট অফিসকে কাজে লাগানো যেতে পারে। যাতে মানুষ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পণ্য পেতে পারে।
ই-কমার্স নীতিমালাটি খসড়া পর্যায়ে রয়েছে, যা শিগগিরই সংসদে আলোচনার মাধ্যমে ‘নীতিমালা’ এবং পরবর্তীকালে ‘বিধিমালা’ হিসেবে চূড়ান্ত হবে উল্লেখ করে শমী কায়সার বলেন, প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে ই-কমার্স খাত দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের মত ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। সেজন্য এ খাতে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় অর্থায়ন এবং সম্ভাবনাময় বাজার চিহ্নিত করতে হবে।