আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- ‘আমি কোনো কিছুর বিষয়ে আলোচনা করতে বাদ দেইনি। অতঃপর সবাই স্বীয় প্রতিপালকের কাছে সমবেত হবে’ (সূরা আনয়াম-৩৮)। অর্থাৎ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, আন্তর্জাতিক, সামাজিকসহ সকল বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট বর্ণনা কোরআনের মাধ্যমে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন।
পবিত্র রমজানের সাথে ব্যবসার একটি পরোক্ষ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ নবী-রাসুল, সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তাই ‘ব্যবসা’কে ইসলামে সুন্নাতের মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামের তরিকা অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করলে সুন্নাত আদায়ের সাওয়াব পাওয়া যাবে, অপরদিকে জাগতিক রীতিতে ও মানুষের জন্য কষ্টকর পদ্ধতিতে ব্যবসা করলে গুনাহগার হিসেবে হাশরের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
সাধারণতঃ সেহরি সামগ্রী, ইফতারি সামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসমূহ আমাদের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৌঁছে।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন’ (সূরা বাক্বারাহ-২৭৫)। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ” (সূরা নিসা-২৯)।
ব্যবসায়ীদের মর্যাদা বর্ণনা করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সত্যবাদী আমানতদার
ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিবসে নবী-সিদ্দিক এবং শহীদগণের সাথে থাকবে’ (তিরমিজী শরীফ)। অন্য হাদিসে নবীজী আরো বলেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তা-ই সর্বোত্তম’ (মুসনাদে আহমদ)।
বড় দুঃখের বিষয় হল, আমাদের প্রিয় মাতৃকা বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে মাহে রমজান আসলে ব্যবসায়ীগণ সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ও পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে ফেলেন। যা নিন্দিত, অমানবিক ও অধর্মীয় কাজ। আমাদের দেশের ব্যবসায়ীগণ রমজান মাসকে তাদের ‘ব্যবসার মাস’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। যার কারণে মূল্য বাড়িয়ে দেন, মওজুদদারী করেন ও পরিমাপের সময় কম দেন।
অথচ মুসলিম অন্যান্য দেশসমূহে দেখা যায়, পবিত্র মাহে রমজান আসলে মূল্য কমানোর হিড়িক পড়ে, রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিয়ো না’ (আর-রহমান ৯)।
ব্যবসায়ীদের রাসুলের হুঁশিয়ারী- ‘কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীরা মহা অপরাধী হিসাবে উত্থিত হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করবে, নেকভাবে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ব্যবসা করবে তারা ব্যতীত’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)।
নবীজী বলেছেন- ‘যে মজুদদারী করে সে পাপী’। তিনি আরো বলেন-‘হে বণিক দল! তোমরা মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কারবার থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে’। অন্য জায়গায় বলছেন, ‘নিশ্চয়ই যে প্রতারণা করে সে আমার উম্মত নয়’।
মানবিকভাবে যদি আমরা চিন্তা করি, পবিত্র রমজান মাসে একজন মুসলমান সিয়াম সাধনা করবেন তথা আল্লাহ আরোপিত ফরজ সিয়াম পালন, পাশাপাশি সুন্নাত-নফল ইবাদত করবেন, দুয়া-দরূদ পাঠ করবেন, কুরআন তিলাওয়াত করবেন, জিকির-আজকার করবেন। অন্যদিকে একজন মুসলিম ভাই তার অপর মুসলিম ভাইকে সেহরি সামগ্রী, ইফতারি সামগ্রী সৌজন্য হিসেবে প্রদান করবেন।
এরূপ অবস্থায় ব্যবসায়ী সমাজ যদি মূল্য বাড়িয়ে মুসলমানদের ইবাদত-রিয়াজত কর্মে কষ্ট প্রদান করেন, তাহলে এর পরিণাম নিজেই চিন্তা করে নিন।
তাই আসুন, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করি। ইসলামি পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করে সাওয়াবের অংশীদার হই। সিয়াম পালনকারীদের কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকি। মূল্য কমানোর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারীর সুবিধা প্রদান করে আমরাও নেকির কাজে অংশগ্রহণ করি।