১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এ কারণে বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধার কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদন বাতিল করেছে কানাডা ইমিগ্রেশন।
শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও হতে পারেন এমন আশঙ্কায় তাকে কানাডায় প্রবেশের অযোগ্য বলছে কানাডা ইমিগ্রেশন। এমনকি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উর্ধ্বতন পদে চাকুরি করা এই মুক্তিযোদ্ধা ইমিগ্রেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না। কানাডার ফেডারেল কোর্ট এই আবেদনের শুনানী করতে পর্যন্ত সম্মত হয়নি।
কানাডা ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মুুক্তিযোদ্ধা তৌফিকুল আরিফের এই বিড়ম্বনার খবর প্রকাশ করেছে নতুনদেশ ডটকম।
নতুন দেশের প্রতিবেদনে জানানো হয়, অটোয়ায় বসবাসরত ফয়সাল আরিফ তার বাবা তৌফিক আরিফ এবং মা কে স্পন্সর করে কানাডায় নিয়ে আসার জন্য ২০০৭ সালে আবেদন করেন। প্রায় ৭ বছর পর ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরে তাদের প্রাথমিক সাক্ষাতকারের জন্য ডাকা হয়। সিঙ্গাপুরে ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে সাক্ষাতকারে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরেন। ওই সময় তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি গ্রামবাসীকে হালকা অস্ত্র চালনা শিখিয়েছেন যাতে তারা গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিতে পারে। তিনি নিজেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলে সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে তাকে জানানো হয়, তার আবেদনপত্র কানাডা ইমিগ্রেশন প্রত্যাখান করেছে। সাধারনত ইমিগ্রেশনের আবেদন নাকচ হলে তার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তৌফিকুল আরিফ কোনো আপিল করতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।
কানাডার ফেডারেল সরকারের পলিসি এনালিষ্ট হিসেবে চাকরীরত ছেলে ফয়সাল আরিফ এক্সেস টু ইনফরমেশন আইনের আওতায় পিতা তৌফিক আরিফের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ফাইলের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেন। তাতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার কারনে তার স্পন্সরশীপ আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
ইমিগ্রেশন কানাডার ফাইলে তৌফিকুল আরিফ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, আবেদনকারী নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি একজন বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭১ সালে দেশটির মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ইমিগ্রেশন অফিসার এই তথ্য উল্লেখ করে লিখেছেন, বাঙালী মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিলেন বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে বিশ্বাস করার কারণ আছে।
ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে, কানাডায় স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বসবাসের জন্য তার আবেদন সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ক্রিনিং ডিভিশন মূল্যায়ন করেছে। ফাইলে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে তার ভূমিকার কারনে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজি প্রটেকশন অ্যাক্টের ৩৪ ধারা অনুসারে তিনি কানাডায় প্রবেশের অনুপুযুক্ত । ফাইলে বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘নীপিড়নমুলক আচরণের’ বিবিসির একটি সংবাদের রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে।
ফয়সাল আরিফ আইনি প্রতিকার পাওয়ার জন্য ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিসের আদালতে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খ্যাতিমান ইমিগ্রেশন আইনজীবী ব্যারিস্টার রেজাউর রহমানকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু আদালত এই মামলায় শুনানী করতেই সম্মত হননি।