চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইতিহাস কথা কয়

এ কথা ভুলবার নয় যে ৭ মার্চ এবং ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলার জনগণকে “যার যা আছে – তাই নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে” পড়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানিয়েছিলেন।

সত্য এ কথাও যে ২৫ মার্চ রাত গভীরে ৩২ নং ধানমন্ডি, ঢাকা থেকে পাকিস্তানী বর্বর সৈন্যরা গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় বাঙালির প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে, আটকে রাখে পশ্চিম পাকিস্তানী কারাগারে। এই ঘটনাটি গোপন রাখা হয়েছিল যেমন গোপন রাখা হয়েছিল একই রাতে অতর্কিতে ঘুমন্ত পুলিশ বাহিনীর অসংখ্য সদস্যকে এবং পিলখানা রোডের ইপিআর হেড কোয়ার্টার্সে একইভাবে অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে বিপুল সংখ্যক ইপিআর বাঙালি সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আরও সত্য যে, একই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার হলগুলোতে আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে শত শত ঘুমন্ত শিক্ষ-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মচারীদেরকে খুন করে উল্লাস করেছিল নৃশংস হায়েনার দল।

এই তাবৎ কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা হীনভাবে হয়নি। পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তর পরিমাণ অস্ত্র ও সৈন্য জাহাজযোগে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনিয়ে তারা “অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যার প্রকল্প গ্রহণ করেছিল এবং তেমনই গোপনীয়তার সাথে তা বাস্তবায়ন করেছিল।

মার্চের শুরু থেকে ঢাকায় অসহযোগ আন্দোলনের খবর সংগ্রহ করার লক্ষ্যে বিদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক এসে সোনারগাঁও হোটেলে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের কর্তব্য পালনের জন্য। আবার ওই “অপারেশান সার্বলাই” ও গণহত্যার ঘটনা যাতে বিদেশে প্রচারিত না হতে পারে তাই অগ্রিম ঐ সাংবাদিকদেরকে নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। এরই মধ্যে ২/১ জন বিদেশী সাংবাদিক কৌশলে লুকিয়ে থেকে ২৫ মার্চ রাতের তাবৎ ঘটনা নিজেদের ক্যামেরায় ধারণ করে তা বিদেশী যাত্রীর মাধ্যমে ঘটনার বিবরণসহ বিমানযোগে পাঠিয়ে দিয়ে খালি হাতে, অর্থাৎ কাগজ-কলম ক্যামেরা প্রভৃতি, গোপনে দেশত্যাগ করেন ভারত সীমান্ত পেরিয়ে।

উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তানের সংবাদপত্র ও রেডিও সমূহে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন প্রভৃতি তখনও এ দেশে না আসার সুযোগ নিয়ে, ঢাকার তাবৎ ঘটনাবলী প্রকাশে সামরিক নিষেধাজ্ঞা জারী করে শুধুমাত্র তাদের ইস্যুকৃত প্রেসনোট ছাপাতে বাধ্য করা হয়।

ইতিহাসের সত্য হলো- ঐ বিদেশী সাংবাদিকদের পাঠানো পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত হলো। মুহূর্তেই বাঙালি নিধন যজ্ঞের খবর পেয়ে বিশ্ববাসী মর্মাহত হলেন।

অত:পর কী?
প্রশ্ন করা যেতেই পারে দেশের পরিস্থিতি এমনই ভয়াবহ যে সশস্ত্র যুদ্ধ ব্যতিরেকে বাঙালি জাতিকে বাঁচানোর কোন সুযোগ নেই। কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা অধিকাংশ নিহত, বাদ-বাকীরা নিরস্ত্র এবং নানা ক্যান্টনমেন্টে বন্দী, পুলিশ, ইপিআরও তাই।

দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বেসামরিক কোটি কোটি নর-নারী শিশু আত্মরক্ষার্থে ভিটেমাটি ছেড়ে এক কাপড়ে ছুটলেন ভারতে। তরুণেরাও একই পথ ধরলো।

তাজউদ্দিন এগিয়ে এলেন
অপরদিকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আহমেদ কতিপয় সঙ্গী নিয়ে ভারতে ঢুকে সেখানকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাত করে তরুণদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র সজ্জিত করে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে পাঠিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার সুযোগ করে দিতে অনুরোধ জানালে তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও আন্তরিক সহানুভূতি প্রকাশ করেন।

ইন্দিরা গান্ধী বলেন, তার এবং ভারত সরকারের পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্বেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার গঠিত না হলে কিছুই করা সম্ভব হবে না-বিশেষ করে সামরিক প্রশিক্ষণ-অস্ত্র সরবরাহ প্রভৃতি। তবে যে লক্ষ লক্ষ নর-নারী দেশত্যাগে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থী শিবির খুলে তাদেরকে আশ্রয়, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার মানবিক কারণে দ্বিধা করবে না।

অত:পর তাজউদ্দিন আহমেদ তার নেতৃত্বে ক্যাপ্টন মনসুর আলী, এএইচএম. কামরুজ্জামান, খোন্দকার মোশতাক আহম্দেকে নিয়ে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন এবং তার রাষ্ট্রপতি হন বঙ্গবন্দু শেখ মুজিবর রহমান ও উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তখন পাকিস্তানী কারাগারে আটক থাকায় উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এইবার ভারত সরকার এগিয়ে এল, স্বীকৃতি দিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভাকে। দফায় দফায় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় যুদ্ধ। হাজার হাজার দেশত্যাগী তরুণকে স্থান দেওয়া হয় পশ্চিম বাংলা-ত্রিপুরা-আসামের সীমান্ত জুড়ে অসংখ্য যুব শিবির গঠন করে। সেখান থেকে তরুণদেরকে পাঠানে শুরু হয় ভারতের সেনাবাহিনীর হাতে গেরিলা ও সামরিক প্রশিক্ষক নিতে। প্রশিক্ষণান্তে তাদেরকে অস্ত্রসহ দেশের অভ্যন্তরে পাঠানো হয় পাক-বাহিনীকে পর্যুদস্ত করতে এবং শত্রু শিবিরে আঘাত হানতে।

অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে কতিপয় যুবনেতা ও সংসদ সদস্য অনাস্থা জ্ঞাপন করলে নীতি নিষ্ঠ তাজউদ্দিন আহমেদ সংসদের অধিবেশন ডাকেন অনাস্থা প্রস্তাব আলোচনা করতে। তার আগেই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আম্রকাননে (বাংলাদেশের মাটিতে) তাজউদ্দিন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে বিপুল সংখ্যক বিদেশী সাংবাদিকের উপস্থিতিতে।

নানা বিতর্কের পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়ার মত আর কোন গ্রহণযোগ্য বিকল্প নেতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাজউদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়। এবারের পুনরায় আলোচনা করে পুন:প্রতিষ্ঠিত হয় তাজউদ্দিনের সর্বসম্মত নেতৃত্ব।

মুক্তিযুদ্ধও অগ্রসর হচ্ছিল। অসংখ্য পাকসেনা ও তাদের এ দেশীয় দালাল রাজাকার, আলবদর, আল শামস ও তথাকথিত শান্তি বাহিনী নিধন ও চলতে থাকে সাফল্যের সাথে। মুক্তিবাহিনীর এই সাফল্যের খবর প্রতিদিন প্রচারিত হতে থাকে আকাশবানী, ভারতের সংবাদপত্র সমূহে, বিবিসি সহ বিদেশী অসংখ্য বেতার ও সংবাদপত্রে।

ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি তাজউদ্দিন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে। আমেরিকা, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের সফল মুসলিম রাষ্ট্র প্রকাশ্য, নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন জানালো পাকিস্তানের প্রতি পরিস্থিতির জটিলতার মুখে খোন্দকার মুশতাক (তখন মুজিবনগর সরকারের বিদেশী মন্ত্রী) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ব্যর্থ করে দিয়ে কোন না কোনভাবে পাকিস্তান রক্ষার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন। ভারত সরকারের গোয়েন্দা বাহিনী মুশতাক ও কলকাতাস্থ আমেরিকার কনসাল জেনারেল গোপন আলাপের ত্যথ সংস্থা করে ইন্দিরা গান্ধীকে জানায় যে মুশতাক আমেরিকার সাথে আলোচনা করছে যে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী কারাগার থেকে ফেরত আনার জন্য একটি শিথিল কনফেডারেশন গঠন করে পাকিস্তান রক্ষা করা হোক। ইন্দিরা গান্ধী তৎক্ষণাৎ খোন্দকার মুশতাককে গৃহবন্দী করলেন যাতে বাইরে কারও সাথে তিনি যোগাযোগ করতে না পারেন। তাজউদ্দিন এই ব্যবস্থার প্রতি সমর্থন জানিয়ে মোশতাককে মন্ত্রীত্ব থেকে অব্যাহতি না দিয়ে তার সকল ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য অন্য একজনকে মোশতাকের সকল দায়িত্ব অর্পণ করে ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধকে রক্ষা করেন।

ইতোমধ্যে জানা যায় দেশের অভ্যন্তরে পাক-বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলভাবে যুদ্ধ পরিচালনারত ‘মুক্তিবাহিনী’র (মুজিবনগর সরকার সমর্থিত) বিপরীতে ‘মুজিব বাহিনী’ নামে অপর একটি বাহিনী গঠিত হয়েছে। তারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে যাচ্ছে কিন্তু পাক-বাহিনীর যুদ্ধ না করে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, তাজউদ্দিনের জেদের ফলে বঙ্গবন্ধু যদি মুক্তি না পান- তখন যেন তাজউদ্দিনকে অপসারণ করে তাদের নেতৃত্ব বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হয়। বাহিনী গঠন পারস্পারিক সংঘাত ও হানাহানিই সৃষ্টি করতে পারে মাত্র। তাই মুজিবনগর সরকার মুজিব বাহিনীকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এটি যে মুশতাক ও আমেরিকারই সর্বশেষ ষড়যন্ত্র তা বুঝতে দেরী হয় না।

এক পর্যায়ে ইন্দিরা গান্ধী তাজউদ্দিনকে দিল্লীতে ডেকে নিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যে পর্যায়ে গেছে তাতে ভারত সরকারের একার পক্ষে আর বেশী অগ্রসর হওয়া সম্ভব না। কারণ পাকিস্তানের পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে আমেরিকা, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলি। এদের মিলিত শক্তিকে মোকাবিলা করা ভারত সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ন্যাপ, কমিউনিষ্ট পার্টি যারা মুক্তিযুদ্ধে সকল শক্তি নিয়ে অংশ গ্রহণ করেছে এবং মুজিবনগর সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে তাদের প্রতিনিধিদেরকে মুজিবনগর সরকারের সাথে সম্পৃক্ত করে সমাজতান্ত্রিক বিশ্বকে, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় সমর্থনে না আনতে পারলে এক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।

এরই পরিণতি স্বরূপ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কমরেড মনি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ও মনোরাঞ্জন ধরকে তাজউদ্দিন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারা আলোচনা করে সোভিয়েত ইউনিয়নে ন্যাপ-কমিউনিষ্ট পার্টির নেতাদেরকে সোভিয়েতে গিয়ে প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্ট করার সিদ্ধান্ত গৃহীত। কমরেড মনি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ মস্কো এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে গিয়ে ব্যাপক আলোচনা করে বুঝাতে সক্ষম হন দক্ষিণ পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মার্কিন প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সফল হলে। বিস্তারিত আলোচনার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন ব্যতীত সমগ্র সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা করেন এবং শীঘ্রই ভারত সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তি সাক্ষরিত হওয়ার পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একটি নতুন মাত্রা অর্জন করে।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেষ চেষ্টা হিসেবে আমেরিকা তার সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে পাঠালে সাথে সাথে সোভিয়েতের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারী জানায় যে ঐ মুহূর্তে সপ্তম নৌবহরকে ফিরিয়ে না নিলে তারা মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। অত:পর সপ্তম নৌবহর ফিরে যায় এবং ষোলই ডিসেম্বর অপরাহ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই যুদ্ধের ময়দানের বিজয় বাঙালি জাতি যাঁদের জীবন বাজি রাখা লড়াই এর ফলে পেয়েছিলেন বিজয় অর্জন ও আন্তর্জাতিক ম য়দানে আপ্রাণ চেষ্টা করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানে ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে মুক্ত করে আনতে দেশী বিদেশী নানা মহলকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তার মুক্তি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে সফল করেছিলেন তাকে সঠিকভাবে ইতিহাসে মর্যাদার সাথে স্থান দিতে হবে।

কারা এই দুঃসাহসী নেতা?
আমরা জানি যুদ্ধের ময়দান ১৯৭১ এ কী ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। কত ষড়যন্ত্র হয়েছিল সফল প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহম্দে ও তার মন্ত্রিসভার এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তথাকথিত কনফেডারেশন গঠনের নামে। এগুলো বানচাল করা এবং ইন্দিরা গান্ধীর পরামর্ধে মুক্তিযুদ্ধে সফল করতে সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন আদায় করতে আন্তর্জাতিক শত্রুদের সকল ষড়যন্ত্র সফল করা জন্য। তাই নিম্ন বর্ণিত দুঃসাহসী নেতৃবৃন্দ যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা সফল করে তুলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সফল করে তুলেছিলেন।

সেই নেতৃবৃন্দ হলেন: তাজউদ্দিন আহমেদ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ, কমরেড মনি সিং, মনোরঞ্জন ধর প্রমুখ। তাই মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধীনতার কথা, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কথা বলতে বারংবার শ্রদ্ধার সাথে এঁদের নাম উচ্চারণ করতে হবে। নইলে সঠিক ইতিহাস থেকে পরবর্তী প্রজন্ম বঞ্চিত হবে-আমরাও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তাদেরকে না জানানোর দায়ে কোনো একদিন অভিযুক্ত হবো।

ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়া, ইতিহাস গোপন করা- এ দুই-ই ইতিহাস বিকৃতির সামিল। কিন্তু বিকৃত করে, ভুলিয়ে দিয়ে বা গোপন করে যে ইতিহাস কথাও মুছে ফেলা যায় না তা বাংলাদেশ সহ গোটা পৃথিবীতে প্রমাণিত।

তাই বলি, আজ হোক, কাল হোক-ইতিহাস কথা বলবে। সাময়িকভাবে ইতিহাস চাপা দিয়ে রাখলেও চিরকাল কখনোই তাকে ঢেকে রাখা যায় না।

আপন এবং অন্তর্নিহিত শক্তির জোরেই ইতিহাস একদিন সঠিকভঅবে জাতির সামনে এসে হাজির হয়।

আবারও বলি, ইতিহাস কথা কয়।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)