চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ইচ্ছে আছে, প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের রান্না শেখাবো: কেকা

‘দীর্ঘদিন আমি রান্নার সঙ্গে ছিলাম। রান্না করে আজকে যে আমি এতো দূর চলে আসছি, এখন মনে করছি মানুষের জন্য কিছু করা উচিত। টেলিভিশনে আমার রান্নার পঁচিশ বছর উপলক্ষ্যে কিছু প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। আমাদের কুকিং অ্যাসোসিয়েশন আছে। আমি এটার প্রেসিডেন্ট। আমরা সারা বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে কাজ করছি। দেশের নারীদের নিয়ে। ‘রান্না শিখে স্বাবলম্বী হোন’-এ স্লোগানে ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। আর আমার অনেক দিনের একটা ইচ্ছা, প্রাইমারি স্কুলের ফোর/ফাইভের বাচ্চাদের রান্না শেখাবো। আমি মনে করি ছোট বয়স থেকেই যদি বাচ্চারা রান্না সম্পর্কে জ্ঞান পায় তাহলে বড় হয়ে সেটা কাজে দিবে। কোন খাবার কতোটা পুষ্টি সম্মত, কোন খাবার খাওয়া ঠিক না এগুলো শেখাতে চাই। প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদেরকে আমরা ফ্রিতে কেকা’স টয় কিচেন নামে খেলনা দিবো। তারা এমনি এমনি রান্না শিখবে। আর ফোর ফাইভের বাচ্চাদের বাংলাদেশ ঘুরে ঘুরে আমরা রান্না শেখাবো। স্পন্সর পেলে হয়তো এগুলো নিয়ে কোনো চ্যানেলে আমরা প্রতিযোগিতার আয়োজন করবো।’

নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এভাবেই কথা বলছিলেন দেশের বিশিষ্ট রন্ধন বিশেষজ্ঞ কেকা ফেরদৌসী।

বর্তমান সময়ে টেলিভিশন রান্নার অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রন্ধনশিল্পী হিসেবে সমাদৃত কেকা ফেরদৌসী। টেলিভিশন ক্যারিয়ারে তার পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ায় এই বিশেষ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে প্রাণ গুঁড়া মশলার নিবেদনে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও নৈশভোজের। যেখানে উপস্থিত ছিলেন চ্যানেল আই পরিবার। কেকা ফেরদৌসীর রান্নার অনুষ্ঠানে স্পন্সর, সহযোগিদের ছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন কেকা ফেরদৌসীর পরিবার পরিজন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মা ও প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মা প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন

মেয়ের এই বিশেষ দিনে কেকা ফেরদৌসীর মা ও দেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনও ছিলেন উপস্থিত। মেয়েকে আশির্বাদ জানিয়ে তিনি বলেন, কেকা দীর্ঘদিন ধরে রান্নার সঙ্গে জড়িত। ধীরে ধীরে তার কর্মসংস্থান বেড়ে যাচ্ছে। এটা দিন দিন আরো বড়, আরো সুন্দর হোক এটাই আমি চাই।

শুধু পঁচিশ বছর নয় কেকা ফেরদৌসী আরো দীর্ঘদিন রান্নার সঙ্গে জড়িত থাকবে এমন প্রত্যাশা জানিয়ে বড় ভাই ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর বলেন, খাবারের জন্য কেকার যে আলাদা চিন্তা ভাবনা সেটাই কেকাকে পঁচিশ বছর রান্নার সঙ্গে থাকতে সহায়তা করেছে। আমরা আশা করি কেকা আরো দীর্ঘদিন রান্নার জগতে থাকবে।

রান্নার আগ্রহটাকে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন কেকা ফেরদৌসী। এমনটাই মন্তব্য করেছেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেকা ফেরদৌসীর টেলিভিশনে রান্নার পঁচিশ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শাইখ সিরাজ বলেন, ছোট বেলা থেকেই কেকার আগ্রহ ছিল রান্নার প্রতি। আর সেই আগ্রহকেই সে টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রূপ দিয়েছে। এটা অনেক বিরাট ব্যাপার।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী রান্না তুলে আনা এবং সংগ্রহ করে কেকা যেগুলো মানুষের সামনে টেলিভিশনের মাধ্যমে তুলে ধরছেন এটা বিশাল আর্কাইভ হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তার স্বামী ও প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু। অনুষ্ঠানে তিনি কেকার প্রতি একটি অনুরোধও করেন। বলেন, টেলিভিশনে যে তিনি ‘মায়ের হাতের রান্না’ নামের একটি টাচি অনুষ্ঠান করতেন, সেটা যেন আবার চালু করেন।

এছাড়া কেকা ফেরদৌসীর রান্না নিয়ে অনুষ্ঠানে মজার মজার কথা বলেন জনপ্রিয় অভিনেতা আফজাল হোসেন, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, নারী উদ্যেক্তা কনা রেজাসহ অনেকে।

মুনিরা সুলতানা ও মেহেরুন নিসার হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন কনা রেজা ও কেকা ফেরদৌসী। ছবি: তানভীর আশিক
মুনিরা সুলতানা ও মেহেরুন নিসার হাতে চেক তুলে দিচ্ছেন কনা রেজা ও কেকা ফেরদৌসী। ছবি: তানভীর আশিক

শেষের দিকে রান্নায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য কেকা ফেরদৌসীর রান্নাঘরের পক্ষ থেকে সম্মাননা তুলে দেয়া হয় রান্না বিষয়ক বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো স্কুল ‘আপন ঘর’-এর মুনিরা সুলতানা ও টেলিভিশন চ্যানেলে জনপ্রিয় আরেক রন্ধনশিল্পী মেহেরুন নিসার হাতে। তাদেরকে মেডেল ও পঁচিশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন নারী উদ্যেক্তা কনা রেজা।

কেকা ফেরদৌসীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা এবং তার রান্না বিষয়ে অতিথিতের কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে মঞ্চে গানে গানে অতিথিদের মাতিয়ে তুলেন চ্যানেল আইয়ের ক্ষুদে গানরাজ ও সেরা কণ্ঠের শিল্পীরা।

ছবি: সাকিব উল ইসলাম