বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নির্বিঘ্নে সব ধরনের দাপ্তরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অথরিটির (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। তিনি মনে করেন: দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নত না করে সারা জীবন বিদেশিদের দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা আসবে না। আর সেজন্যই সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে আকর্ষণ করতে বেজা এই সেমিনারের আয়োজন করে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে সুষ্ঠু বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে পবন চৌধুরী বলেন: ‘আমরা কাজে শতভাগ সততায় বিশ্বাস করি। বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের অভিযোগ শুনে তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করি। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আর বেজা সেই কাজটি করে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন: ‘দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নত না করে সারা জীবন বিদেশিদের দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা আসবে না। কারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার অভাব নেই। সেজন্যই সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে।’
নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করতে ‘ফুড ভিলেজ’ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন: কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি শস্য এনে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুত করা হবে। যা হবে বাংলাদেশের প্রথম নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতের জোন। এখানে প্রায় ৩শ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে।
বেজার কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে পবন চৌধুরী বলেন: বিনিয়োগকারীদের জন্য বেজার সেবা আরও গতিশীল করতে ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ একটি সেবা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারীরা সব ধরনের দাপ্তরিক সুবিধা পাবেন। চলতি বছরেই এ বিষয়ে একটি আইন সংসদে পাস হবে।
এ সময় তিনি আরও বলেন: বেজার নিজস্ব আয় থেকে বেসরকারি ইপিজেডগুলোর জন্য ৫শ’ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এই ফান্ড আরও বড় হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আব্দুল নাসের বলেন: অত্যন্ত দক্ষতার সহিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ করে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন: ‘বেজাকে এনবিআরের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করছে। এনবিআর ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব একটা পলিসি করতে যাচ্ছে। এনবিআর থেকে ইকনোমিক জোনের বিনিয়োগকারীরা ভ্যাট, আমদানি শূল্ক ও কাস্টমস ডিউটিসহ বিভিন্ন রকম কর সবিধা পাচ্ছে।
ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বেজাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় সেশনে ‘এনাবলিং এনভায়রনমেন্ট ফর ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন: ‘ইকোনমিক জোনের উৎপাদিত পণ্য শুধু রপ্তানির জন্য নয়; বাংলাদেশেও এসব পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বিশেষ দিকটি তুলে ধরতে হবে’।
তিনি বলেন: দেশের শিল্প কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের দক্ষ শ্রমিকদের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিদেশি জনশক্তি। এই ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে শিল্পায়নের সুফল আসবে না। তাই শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশীয় দক্ষ জনশক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
আলোচনায় জাপানি বিশেষজ্ঞ কুবাইশি বলেন: বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার অনেক কারণ আছে। দেশটি প্রায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অবস্থা ধরে রেখেছে। দ্রুত শিল্প-কারখানার বিস্তারে বেজার প্রচেষ্টা খুবই বাস্তব সম্মত।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সুরাইয়া বেগম, এফবিসিসিআইর সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমেদ, বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের কর্মকর্তা সীমা মাংগি, আব্দুল মোনেম ইকোনমিক জোনের এমডি মাইনুদ্দিন মোনেম প্রমুখ।