ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব)-এ শিক্ষার্থীদের চলমান বেতনভাতা সংকোচনের আন্দোলন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিগত কয়েকদিন ধরে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব)-এ শিক্ষার্থীদের চলমান বেতনভাতা সংকোচনের আন্দোলন আমরা লক্ষ্য করছিলাম। বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী অসন্তোষ নতুন নয়, অসঙ্গতও নয়। এটা ঠিকই যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের বড় অংশই শিক্ষার্থী অসন্তোষ ও আন্দোলনকে কেবলই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাদান হিসাবে দেখতে পছন্দ করছিলেন। কিন্তু সম্ভবত তারা বিস্মৃত হয়েছিলেন যে সমাজ-বাস্তবতা আর স্বার্থের প্রসঙ্গগুলো এত সরল নয়। ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন থেকে অন্তত এ বিষয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়েছিলেন।
ইউল্যাবের দুজন শিক্ষার্থী বহিষ্কার নিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তারপরও করোনাকালীন এই ন্যায্য দাবির প্রতি ইউল্যাবের মতো স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান সংবেদন নিয়ে তাকাবেন বলে আমরা আশা করেছিলাম। প্রতিষ্ঠানটির সুনামের কারণেই আমরা প্রশাসনিক দক্ষতার আশাও করেছিলাম। বাস্তবে আমাদের হতভম্ব করে দিয়ে ১৫ নভেম্বর ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ দুজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে বসল। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেবার জন্য তাদের সহপাঠিরা যখন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এবং সেই সাথে বেতনভাতা অর্ধেক করার দাবিও তারা বলবৎ রেখেছেন, তখন তাদের উপর বলপ্রয়োগ করে আন্দোলন থেকে সরানোর অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য করেছি।
ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ সকল মাত্রা অতিক্রম করে অবশেষে ৫ ডিসেম্বর বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং শিক্ষার্থী দুজন গ্রেপ্তার হন। আমাদের এই পত্র লেখার সময় সেই শিক্ষার্থী দুজন যদিও জামিন পেয়েছেন, কিন্তু একটা নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের প্রতিক্রিয়াতে আমরা অতিশয় উৎকণ্ঠা বোধ করছি।
এরপরে বিবৃতিতে বলা হয়, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি ন্যায্য সে বিষয়ে আমাদের কোনো সংশয় নেই। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইউল্যাব-এর মালিক মুখ্য কর্পোরেট গ্রুপও জানেন কী ধরনের ‘সামাজিক প্রতিশ্রুতি’ তারা দিয়ে আসছেন এই মহামারির মধ্যে। আন্দোলনকারীদের পদক্ষেপ ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশাসনের আপত্তি থাকলে সেগুলো নিয়ে আলাপ-মীমাংসা করার মতো দক্ষ জনবল ইউল্যাবের রয়েছে। কিন্তু বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আমাদের ক্রুদ্ধ শাসকের আস্ফালন মনে হয়েছে, বিচক্ষণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়। মামলা ও গ্রেপ্তার কেবল হতভম্বই করতে পারে।
সবশেষে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, ইউল্যাব কর্তৃপক্ষ এখনো এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক রাস্তায় সমাধান করতে পারেন। কিন্তু তাদের অবশ্যই আস্ফালনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সংবেদনশীল প্রশাসকের রাস্তা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আহ্বান করি শিক্ষার্থীদের দাবিকে তারা আমলে আনুন, বহিষ্কারাদেশ তুলে নিন এবং মামলা-হামলার রাস্তা ছেড়ে বিচক্ষণতার পথ গ্রহণ করুন। কেবল ইউল্যাবের বিদ্যামূল্যকে গুরুত্ব দিলেও প্রশাসনের এটা পারা দরকার।
গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
১। তাসনীম সিরাজ মাহবুব সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২। ফাহমিদুল হক অধ্যাপক, গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩। মানস চৌধুরী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৪। গীতি আরা নাসরীন অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৫। সায়েমা খাতুন সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৬। নাসরিন খন্দকার সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৭। নাাসির আহমেদ অধ্যাপক, ইংরেজি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
৮। প্রিয়াংকা কুন্ডু প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস
৯। কামরুল হাসান মামুন অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১০। সাজ্জাদ এইচ সিদ্দিকী সহযোগী অধ্যাপক, পিস এন্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১১। সাঈদ ফেরদৌস অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১২। জাকিয়া সুলতানা মুক্তা সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ-৮১০০
১৩। মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৪। মজিবুর রহমান সহযোগী অধ্যাপক, আই ই আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫। আর রাজী সহকারী অধ্যাপক, যোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
১৬। মার্জিয়া রহমান প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৭। রুশাদ ফরিদী সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৮। আরিফুজ্জামান রাজীব সহকারী অধ্যাপক, ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ
১৯। আ. আল মামুন শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২০। কাজী মামুন হায়দার সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২১। মাইদুল ইসলাম সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২২। সুস্মিতা চক্রবর্তী অধ্যাপক, ফোকলোর বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২৩। মাহমুদুল সুমন অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৪। জাভেদ কায়সার সহকারী অধ্যাপক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
২৫। কামাল চৌধুরী সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৬। জায়েদা শারমিন অধ্যাপক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
২৭। আনু মুহাম্মদ অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
২৮। সামিনা লুৎফা সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৯। মির্জা তাসলিমা সুলতানা অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
৩০। বখতিয়ার আহমেদ অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
৩১। কাজী এস. ফরিদ সহযোগী অধ্যাপক, গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
৩২। কাজী রবিউল আলম সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩। তানিয়াহ মাহমুদা তিন্নি প্রভাষক, সমাজতত্ত্ব ও টেকসই উন্নয়ন বিভাগ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়
৩৪। দীনা সিদ্দকী, সহযোগী অধ্যাপক, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
৩৫। নাফিসা তানজীম, সহকারি অধ্যাপক, লেযলি ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র