চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ইউরোপ ও মার্কিনিদের মসনদ দখলের লড়াই

লক্ষণরেখার বৃত্তটি গুটিয়ে আনা হচ্ছে। ফিফার মসনদ ছাড়লেও জোসেফ ব্লাটারের রেহাই নেই। এক সময়ে তার কাছের মানুষ জ্যাক ওয়ার্নার, চাক ব্লেজার’রা ফাঁদে পড়ে উৎকোচ গ্রহণের কথা স্বীকার করছেন। জীবননাশের হুমকি পাওয়ার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি আসল সত্য ফাঁস করার কথা শোনাচ্ছেন জ্যাক ওয়ার্নার’রা।

মার্কিনিদের অনুরোধে (নাকি চাপ!) ইন্টারপোল অভিযুক্ত ফিফার সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জারি করেছে রেড অ্যালার্ট। এফবিআই-আমেরিকান অ্যাটর্নি অফিস রাখঢাক না করেই সারা দুনিয়াকে জানিয়েছে তদন্তের আওতামুক্ত নন সেপ ব্লাটার। ১৭ বছরের রাজত্ব হারানো ব্লাটারকে দুর্নীতির অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।

সাদা চোখে মনে হতে পারে দশকের পর দশক ধরে ফিফায় চলা দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী মার্কিনি ও ইউরোপীয়দের শুদ্ধি অভিযান এটি। আসলে কি তাই? তাহলে বিশ্বকাপ আয়োজক হতে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি কি শুরু হলো ১৯৯৮ সাল থেকে!

১৯৯৪ কিংবা তারও আগে এরকম কিছু অনিয়ম নিয়ে তদন্তের কথা কি বলছে এফবিআই? গত এক সপ্তাহে ফিফা’র উপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সুপার-পাওয়ারদের আগ্রাসি অভিযান নিয়ে এরমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

আন্তর্জাতিক ফুটবল বিশ্লেষকদের দাবি, ফিফায় দুর্নীতি আছে, এটা মিথ্যা নয়। তবে দুর্নীতি দমনের নামে চলছে একতরফা অভিযান, যার লক্ষ্য ব্লাটার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের উচ্ছেদ। যার মাধ্যমে ফিফার আধিপত্য ফিরে পাবে ইংল্যান্ড-জার্মানি’র মতো ইউরোপীয় পরাশক্তি, আমেরিকার মতো বিশ্বমোড়ল।

নাহলে ফিফা সভাপতি নির্বাচনের দু’দিন আগে এফবিআই দুই মার্কিন সাংবাদিককে নিয়ে কেনো সুইজারল্যান্ডে গিয়ে ভোররাতে হোটেলে অভিযান চালিয়ে শুধুমাত্র সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল আমেরিকান সদস্যরাষ্ট্রের ভোটারদের গ্রেফতার করে ফলাও প্রচার করবে? ব্লাটারের ভোট কমাতে এই অভিযান, এখন জোর কণ্ঠেই বলছেন ফুটবল বিশ্লেষকরা।

ওসামা বিন লাদেনের গ্রেফতার অভিযানের মতো এখানেও অন্য দেশে গিয়ে নিজেরাই সাদা পোষাকে গ্রেফতারি অভিযান চালিয়েছে আমেরিকান গোয়েন্দাবাহিনী। পরে নিজেদের সম্মান বাঁচাতে সুইস পুলিশ আলাদাভাবে অভিযোগ দায়ের করেছে গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে

সেপ ব্লাটার তাদের চক্ষুশূল, কারণ ফিফার সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভোটের ফল। ইউরোপ (স্পেন ও রাশিয়া  ছাড়া), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা একজোট হয়েও ব্লাটারকে হারাতে পারেনি। ৭৯ বছর বয়সী এই সুইস এশিয়া ও আফ্রিকার একচেটিয়া এবং সাউথ ও সেন্ট্রাল আমেরিকার আংশিক ভোট নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আমেরিকা ও প্লাতিনিদের দাঁড় করানো প্রার্থী জর্ডানের যুবরাজ প্রিন্স আলি’কে প্রায় ৬০ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে।

ফিফার সদস্য সংখ্যা ২০৯ যা আন্তর্জাতিক ওলিম্পিক কাউন্সিলের চেয়েও বেশি, সেই সংগঠনের নির্বাচনে এতো বড় ব্যবধানে জয় প্রমাণ করে ফুটবলকে ইউরোপ থেকে তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তিক রাষ্ট্রগুলোকে ছড়িয়ে দিতে সফল সেপ ব্লাটার।

বাংলাদেশ সহ অনুন্নত দেশগুলোতে গত এক দশকে ফুটবল একাডেমি ও অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে ফিফা। বিশ্বকাপ আয়োজনের দিকে তাকান, সেখানেও বিশ্বায়নের অপূর্ব উদাহরণ।

২০০২ এ জাপান ও সাউথ কোরিয়া, ২০০৬ এ জার্মানি। পরের আসর সাউথ আফ্রিকা, ২০১৪’তে ব্রাজিল, ২০১৮’তে রাশিয়া এবং ২০২২’এ কাতার। পুরো দুনিয়া পর্যায়ক্রমে আয়োজন করছে বিশ্বকাপ। ২০২৬’এ চীন আয়োজকদের লড়াইয়ে থাকছে।

সোয়াশো কোটি জনসংখ্যার ভারত আয়োজন করছে ২০১৭ সালে অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ। এরপর হয়তো তারাও ফুটবলের মেগা আসর আয়োজনের লড়াইয়ে দাঁড়াবে। এই বিশ্বায়নই ক্ষেপিয়ে দিয়েছে মার্কিন-ব্রিটিশ-অস্ট্রেলিয়ানদের। না হলে ওইসব দেশ থেকে এরমধ্যেই কেনো দাবি উঠবে ২০১৮ এবং ২০২২’র বিশ্বকাপ আয়োজক পুনর্নির্ধারণের ?

এর আগে ২০০৬ বিশ্বকাপ আসর থেকে ইরানকে বহিস্কারের মার্কিনি আবদার উপেক্ষা করেছিলেন ব্লাটার, তার আমলেই প্যালেস্টাইনকে দেয়া হয়েছে ফিফার সদস্যরাস্ট্রের মর্যাদা। এতোদিনের ক্ষোভ, প্রত্যাখানের বদলা নেয়ার সুযোগ ছাড়বে কেনো মার্কিনিরা ! ২০১৮’র বিশ্বকাপ আয়োজক হওয়ার লড়াইয়ে মাত্র দুই ভোট পাওয়া ইংল্যান্ডও আছে তাদের সাথে।

ফিফা কলংকমুক্ত হোক, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলুক, ফুটবল প্রতারকরা শাস্তি পাক, এটা সবার চাওয়া। তবে দুর্নীতি দমনের নামে কাউকে অভিযোগের তীরে শুইয়ে ফেলা আবার কাউকে ছেড়ে দেয়ার দ্বৈতনীতি প্রমাণ করে ফুটবলেও আছে সাম্রাজ্যবাদী কূটচাল। ইউয়েফা, নর্থ এন্ড সেন্ট্রাল আমেরিকান ফুটবল কনফেডারেশনের দুর্নীতির ব্যাপারটি চেপে যাওয়া হচ্ছে কেনো?

(একাধিক বিদেশী পত্রিকার আর্টিকেল অবলমম্বনে)