মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ স্থগিত করতে এবং একইসঙ্গে এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে উদ্দেশ্যমূলক এবং সময়োপযোগী নয় বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মানবাধিকারকর্মীরা পুরনো প্রস্তাব নতুন করে তোলায় এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ইউরোপীয়দের আগে তাদের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রকে মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন।।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, বাংলাদেশের বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব ‘উদ্দেশ্যমূলক’।
ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন উল্লেখ করে তিনি বলেন, খুব বেশিদিন হয়নি যে ইউরোপের দেশগুলো থেকে মৃত্যুদণ্ডের প্রথা বিলোপ করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় এটা তাদের জন্য প্রয়োজনও নেই।
‘আমাদের দেশে এখনও প্রচুর হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে। তাই মৃত্যদণ্ড বিলোপের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব বর্তমান বাস্তবতায় কেনো উদ্দেশ্যমূলক তার ব্যাখ্যা করে হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, আমাদের দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে তখন তাদের এই আহবান অবশ্যই একটি উদ্দেশ্য থেকে করা হচ্ছে। সবাই জানি যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দেশে দুই বড় যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকর দোরগোড়ায়।
সরাসরি উদ্দেশ্যমূলক না বললেও এই দাবি এখন কেনো এমন প্রশ্ন রেখেছেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির। তিনি বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টে মৃত্যুদণ্ড বিলোপের জন্য সব দেশকে চিঠি দেওয়ার প্রস্তাব আগে থেকেই ছিলো। কিন্তু তারা এটা আগে না করে যখন দেশে দুই বড় যুদ্ধাপরাধীর বিচার শেষ, শুধু রায় কার্যকর বাকি, তখন কেনো তা সামনে নিয়ে আসলো?
‘ইউরোপের দীর্ঘদিনের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্রেওতো মুত্যৃদণ্ড বলবৎ আছে। তারা আগে সেখানে চিঠি দিক। আগে সেখানে বন্ধ করুক। তারপর আমাদের কাছে আসুক,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার আহবান জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পত্রিকার সম্পাদকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগ স্থগিত এবং একইসঙ্গে এই প্রথা সম্পূর্ণভাবে বিলোপের কথা বলে।
তবে, একাধিক পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, তাদের হাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চিঠি এখনও পৌঁছায়নি।