ষষ্ঠ ওভারে মোহাম্মদ আমিরের বলে স্লিপে ১০ রান করা জো রুটের ক্যাচটা হাতে জমাতে পারলেন না বাবর আজম। জস বাটলারের সঙ্গে ১৩০ রানের জুটিতে সেই রুটই এক পর্যায়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিচ্ছিলেন পাকিস্তানকে। রুট-বাটলারের জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড ভাঙার প্রস্তুতি সারছিল ইংল্যান্ড! শেষঅবধি সেটি ঠেকিয়ে ১৪ রানের জয় তুলেছে সরফরাজের দল।
জিততে বিশ্বরেকর্ড করতে হত ইংল্যান্ডকে। অনেক কাছে গিয়েও সেটি রেকর্ড আর গড়া হয়নি ইংলিশদের। পাকিস্তানের দেয়া ৩৪৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ৯ উইকেটে ৩৩৪ রানে থেমে গেছে এবারের বিশ্বকাপ স্বাগতিকদের ইনিংস। প্রথম ম্যাচে ১০৫ রানে অলআউট হওয়া পাকিস্তানিরা দ্বিতীয় ম্যাচে জয় তুলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল।
তাতে অক্ষত থেকে গেল আয়ারল্যান্ডের রেকর্ড। ২০১১ আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আইরিশদের ছোঁয়া ৩২৯ রানই এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে রানতাড়ার সর্বোচ্চ ইনিংস।
পাকিস্তানের যা সংগ্রহ তাতে অন্য কোন দল হলে হয়তো চিন্তাতেই কাবু হয়ে যেত। যতই ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হোক, ৩৪৯ করা তো আর মুখের কথা নয়। তবে দলটা ইংল্যান্ড, যারা শেষ চার বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটের সংজ্ঞাটাই বলে দিয়েছে! বিশ্বকাপে নামার আগে এই ইংল্যান্ডকেই ৩৪০ আর ৩৫৮ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়েও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানিদের।
কেবল সেই সিরিজই নয়, ইংলিশদের জন্য প্রেরণা ছিল ট্রেন্টব্রিজের উইকেট। এই মাঠে দুবার ওয়ানডের সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ইংলিশরা। প্রথমটি ২০১৬ সালে, পাকিস্তানের বিপক্ষেই। সেবার মাত্র ৩ উইকেটে ৪৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ তুলেছিল ইয়ন মরগানের দল। দুবছর বাদে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ছাতু বানিয়ে গত বছর ৬ উইকেটে ৪৮১ রান তুলে ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ইনিংসটি আরো একবার নিজেদের করে নিয়েছে দলটি।
এমন উইকেটে ব্যাটিংয়ে নেমে ইংলিশদের শুরু অবশ্য ধাক্কা খেয়ে। শাদাব খানের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে ৮ রানে এলবিডব্লিউয়ে কাঁটা পড়েন মারকুটে ওপেনার জেসন রয়।
তিনে নামা জো রুটকে নিয়ে বলের চেয়ে এগিয়ে থেকে ৪৮ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামাল দেন জনি বেয়ারস্টো। সেই জুটি বড় হওয়ার আগেই আঘাত হানেন ওহাব রিয়াজ। নবম ওভারে পাকিস্তানি পেসারের লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে সরফরাজ আহমেদের হাতে ধরা পড়েন বেয়ারস্টো ( ৩২)।
পরে দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় ইংলিশরা। জো রুটকে অন্যপ্রান্তে রেখে মোহাম্মদ হাফিজের বলে বোল্ড হন অধিনায়ক মরগান (৯)। কিছুক্ষণ বাদে শোয়েব মালিকের বলে কট-বিহাইন্ডের শিকার বেন স্টোকস (১৩)। ১১৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে ইংল্যান্ড।
কিছুপরই খেলায় ফেরে ইংল্যান্ড। জস বাটলারকে সঙ্গী করে এরপর ক্রমেই ম্যাচটাকে হাতের মুঠোতে পুরতে থাকেন রুট। জীবন পাওয়ার পর কিছুটা আস্তে এগোলেও পরে হয়ে ওঠেন মারমুখি। ৪৭ বলে প্রথম ফিফটি ছোঁয়া রুট পরের ৫০ করেছেন মাত্র ৪০ বলে। ৯৭ বলে রুটের করা শতকটি তার ক্যারিয়ারের ১৫ ও এই বিশ্বকাপের প্রথম।
শতকের পরই শেষ রুটের লড়াকু ইনিংস। শাদাব খানকে কাট করতে গিয়ে স্লিপে হাফিজের হাতে ধরা পড়েন ১০৪ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে। ফেরার আগে ১০ চারের সঙ্গে একটি ছক্কার মার ছিল ইনিংসে।
ইংলিশদের পরের দায়িত্বটুকু কাঁধে তুলে নেন বাটলার। রুটকে সঙ্গ দিয়ে পঞ্চম উইকেটে তুলেছেন ১৩০ রান, পরে ৭৪ বলে তুলে নেন নিজের নবম শতকও। শতক পাওয়ার পরের বলেই আমিরের অফকাটারে স্লিপে ধরা পড়েন ওহাব রিয়াজের হাতে।
বাটলার ফেরার পর মূলত ম্যাচটা ঝুঁকে পড়ে পাকিস্তানের দিকে। মঈন আলি চোখ রাঙাচ্ছিলেন। তাকে ফখর জামানের ক্যাচ বানিয়ে শেষ বাধাও উপরে ফেলেন ওয়াহাব। ক্রিস ওকস ও আদিল রশিদরা শেষদিকে কিছু করতে না পারায় জয়ের খুব কাছে থামে ইংলিশদের ইনিংস।
৮২ রান দিলেও ৩ উইকেট নিয়ে কাজের কাজটা করেছেন বিশ্বকাপ দলে ঢুকে সমালোচনায় পড়া ওয়াহাব রিয়াজ। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ আমির। একটি করে উইকেট শিকার ম্যাচসেরা হাফিজ ও শোয়েব মালিকের!
এর আগে প্রথমে ব্যাট করে নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে ৮ উইকেটে ৩৪৮ রানের বিশাল রানের পুঁজি গড়ে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১০৫ রানে অলআউট হওয়ার পর চারিদিক থেকে সমালোচনার ঝড়ে বেশ কাবু হয়েছিলেন পাকিস্তানিরা। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ট্রেন্টব্রিজকে বেছে নেন মোহাম্মদ হাফিজ-বাবর আজমরা।
ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে দারুণ করেছেন তারা। কোনো সেঞ্চুরি পাননি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। তবে তিন ফিফটি ও সবার মিলে মিশে ব্যাটিংয়ে রান পাহাড় দাঁড় করিয়ে ফেলে দলটি।
৬২ বলে সর্বোচ্চ ৮৪ করেন মোহাম্মদ হাফিজ। তার আগে ৬৩ করে আউট হন বাবর আজম। ভুঁড়ি নিয়ে খোটা শোনা অধিনায়ক সরফরাজ এদিন সাজঘরে ফিরেছেন ৪৪ বলে ৫৫ রানে।
ইংলিশদের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ক্রিস ওকস ও মঈন আলি। বাকি ২ উইকেট গেছে মার্ক উডের পকেটে।