প্রতি বছরের মতো জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার প্রথমদিনই আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনায় অবস্থিত অফিসার্স ক্লাবের মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে তার এক আইনজীবী এই আয়কর দেন।
দেশে করসেবা প্রদান ও কর সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরের মতো এবারও আয়কর মেলার আয়োজন করে এনবিআর।
‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ স্লোগানে এবার রাজধানীতে কর মেলা বসেছে অফিসার্স ক্লাবে। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত।
আইন অনুযায়ী, একজন করদাতা কতো টাকা কর দিলেন সেই তথ্য প্রকাশ করার সুযোগ নেই। তবে করদাতা চাইলে তার প্রদত্ত করের তথ্য তিনি নিজেই প্রকাশ করতে পারেন। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী কতো টাকা কর দিয়েছেন তা প্রকাশ করেনি এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিনিধির মাধ্যমে কর দিয়েছেন। তিনি নিজে উপস্থিত নেই। আইন অনুযায়ী যার কর তিনি নিজে না জানালে তা প্রকাশ করা যায় না।
অবশ্য এসময় কর পরিশোধ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার করের তথ্য প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গা থেকে বলা হচ্ছে একবার পর দিলে আর বের হতে পারবেন না। এটা ঠিক নয়। এখন থেকে কোনো অনিয়ম হবে না। দেশের উন্নয়নে সবাইকে কর দিতে হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এবার আমার করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে আয়কর দিয়েছি ৯১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। আমার প্রকৃত সম্পদ ৬৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।
নিজের স্ত্রী ও দুই মেয়ের করযোগ্য আয়, সম্পদের পরিমাণ ও কর পরিশোধের তথ্যও তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমার স্ত্রীর করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তিনি কর দিয়েছেন ৭১ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আমার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, আমার বড় মেয়ের করযোগ্য আয় ৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। তিনি কর দিয়েছেন ২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তার সম্পদের পরিমাণ ৪১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর আমার ছোট মেয়ের করযোগ্য আয় ৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এতে সে কর দিয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। তার সম্পদ ৬১ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী জানান, পরিবারের সদস্যসহ তাদের চারজনের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩২১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। মোট কর দেয়ার পরিমাণ ৭ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
প্রথমদিন আয়কর মেলায় ১৫০ কোটি টাকা কর দিয়েছে গ্রামীণফোন। আর ১০০ কোটি টাকা কর দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। মেলায় প্রথমবারের মতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেওয়া যাচ্ছে। রকেট, ইউপে, বিকাশ, নগদ এবং শিওর ক্যাশ এনবিআরের ই-পেমেন্ট পোর্টালের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
রাজধানী ছাড়াও সব জেলা শহর এবং ৫৬টি উপজেলায় মেলা হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে ৫৭টি গ্রোথ সেন্টারে এক দিন ভ্রাম্যমাণ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা হয়রানিমুক্তভাবে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। বিভাগীয় শহরে ৭ দিনব্যাপী, জেলা শহরে ৪ দিনব্যাপী, ৪৮ উপজেলায় দুই দিন ও আট উপজেলায় দিনব্যাপী করমেলা চলছে। এবার দেশের ১২০ স্থানে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়েছে।