ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করে কয়েকজন আমদানিকারক বলছেন, রোববার ভারত থেকে পেঁয়াজবাহী কোনো ট্রাক বাংলাদেশে আসেনি।
ভারত সরকারের পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কোনো পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ীরা।
রোববার পেঁয়াজ রপ্তানিকারকদের বরাতে আমদানিকারকরা চ্যানেল আই অনলাইনকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা।
ওই আমদানিকারকরা জানান, গত ৫ দিন বন্ধের পর শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভারতে আটকে পড়া পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করে ভারতের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আজ রোববার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনও পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি।
নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তারা আর রপ্তানির দ্বার খুলবে বলে কোনো নিশ্চয়তা পাইনি। গতকাল শনিবার যে পেঁয়াজগুলো এসেছে সেগুলো আগের এলসি করা মাল। এতদিন পথে আটকে ছিল। পঁচে যাচ্ছে এই আশঙ্কায় সেগুলো সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু রপ্তানি শুরু করছে বা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি।
বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে তিনি বলেন, কোনো কিছু না জানিয়েই ভারত গত সোমবার হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এর পর তারা শুক্রবার একটি নোটিফিকেশন জারি করে জানিয়েছে, গত রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর)
টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রপ্তানি করবে। সেই অনুমতি দেয়ায় গতকাল শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ এসেছে। তবে এগুলোর অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পঁচে গেছে। নষ্ট হয়ে সেগুলো থেকে এখন পানি ঝরছে। আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়েও বিপাকে পড়েছে। তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এখনও দুই শতাধিক পেঁয়াজবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে আটকে রয়েছে- এমন তথ্য জানিয়ে এই আমদানিকারক বলেন, এসব পেঁয়াজ ছাড়াও প্রায় ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি দেয়া রয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা নিবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
“তবে অন্তত পেঁয়াজবাহী যেই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে সেগুলো যেন আনতে পারি সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
গত সোমবার থেকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় হু হু করে দেশের বাজারে বেড়েছিল। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৮০ টাকার উপরে উঠে যায়। এরপর শনিবার থেকে ভারত রপ্তানি করবে এমন খবরে দাম কিছুটা কমে দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় নেমে আসে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছিল গত দুইদিন ধরে। তাই দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। এখন সরবরাহ বন্ধ হলে দাম আবারও বাড়বে।
গত বছরও ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন বাংলাদেশে এক পর্যায়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় দাম উঠেছিল এই পণ্যটির। এরপর মিশর, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার ও তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল সরকার। পেঁয়াজের বাজারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জরুরি ভিত্তিতে বিমানেও আনা হয়েছিল পেঁয়াজ।
তবে এবছর যাতে গত বছরের মত পরিস্থিতি না হ সেজন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বার বার আশ্বস্ত করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে।
বাজার মনিটরিং জোরদারের পাশাপাশি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।