অভিনেতা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা তানভীর হাসান আর নেই। শুক্রবার তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও স্বজনরা। তার অকাল মৃত্যুতে শোকার্ত নাট্য ও চলচ্চিত্রের মানুষ।
তানভীর হাসানের অকাল প্রয়াণে সোশ্যাল মিডিয়াতেও শোক বইছে। বিশেষ করে শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা তানভীরের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না। নাট্য ব্যক্তিত্ব শিমুল ইউসুফ তানভীরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ঈশ্বর,পৃথিবী থেকে তুলে নেওয়ার হিসাবের খাতায় আমার পুত্রদের নাম কী সবার আগে তোমার চোখে পড়ে! আহা তানভীর, আহা পুত্র আমার! সেই একই বয়স, সেই একই রকম তুখোড় অভিনেতা দিলীপ আর তানভীর। নিয়তির বিধান মেনে ভাল থাকিস বাপ ওপারে।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ১০তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তানভীর। ছিলেন নাট্যকেন্দ্রের সদস্য। তার মৃত্যুতে মঞ্চের মানুষের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তানভীরের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে চমকে গেছেন অভিনেতা তারিক আনাম। সোশাল মিডিয়ায় তার দেয়া এক স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে স্মৃতি চারণ করেছেন কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা টোকন ঠাকুর।
‘ব্ল্যাকআউট’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন টোকন ঠাকুর। এটি ছিলো তার প্রথম চলচ্চিত্র। আর এই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তানভীর। তার ছবির প্রধান চরিত্রের অকাল প্রয়াণে স্মৃতিকাতর টোকন ঠাকুর লিখলেন:
‘‘Tanvir Hassan, actor/director and Nattokendro member has left us. We mourn his sudden demise. Too early to go Tanvir bhai._ তারিক আনাম খানের টাইমলাইনে এই স্ট্যাটাসটা আমার বিশ্বাস হলো না, ফোন করলাম অভিনেতা-নির্দেশক আশরাফুল আলম রন্টু ভাইকে। ‘হ্যাঁ, তানভীরের হার্ট অ্যাটাক হইছে’ জানার পরে এবার ফোন করি নির্দেশক রেজা আরিফকে, ফোন এনগেজড। ফোন করলাম অভিনেতা ফাহিম মালিক ইভানকে। ফোন এনগেইজ। এরপর ফোন ব্যাক, ফ্রম রেজা আরিফ। ‘হ্যাঁ, ৪ নম্বর রোড, ৪ নম্বর সেক্টর, ৩৬ নম্বর বাসা, যাচ্ছি।’ রেজা আরিফের গলায় কান্না জমাট, ইভানের মেজাজেও কনফার্মেশন। তানভীর হাসান, অভিনেতা, নির্দেশক। ওর ডাকনাম সুমন, চলে গেল! এত তাড়াতাড়ি?
একদা আমার বাসা ছিল কাজিপাড়া, মনিপুর। প্রায় ২০ বছর আগে। তখন তানভীর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগে। তানভীর আমার বাসায় আসত, আমি তখন একটি দৈনিকে জব করতাম, কবিতা লিখতাম। তারও পাঁচ-ছ’বছর পরে, আমার বাসা নিউ এলিফ্যান্ট রোডে, ২০০৬ সালে। যখন ডিজিটাল মাধ্যমে বানানো ছবিকে ছবি হিসেবে দেখার রেওয়াজ হয়নি বঙ্গদেশে, আমি ডিজিটালি বানিয়েছিলাম ‘ব্ল্যাকআউট’। ৯৭ মিনিটের ফিকশন, আমার প্রথম নির্মাণ এবং আনরিলিজ। ২০০৯ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল ক্যামেরার তোলা ছবিকে ছবির মর্যাদায় সেন্সর বোর্ডের আওতায় আনে। এদেশের পিছিয়ে পড়া ছবির লোকেরাও মেনে নেয় ডিজিটাল মাধ্যমকে, কারণ, ৩৫ মিলি মিটারের সনাতনী কৌলীন্য ততদিনে নিজেই বিদায়ের পথে।
কিন্তু ‘ব্ল্যাকআউট’ আর অবমুক্ত হলো না। ঢাকা-সিলেট মিলিয়ে অবাণিজ্যিক ১২ টা শো হয় ‘ব্ল্যাকআউট’-এর, ম্যুভিয়ানা’ ও সেদিনের ‘রঙমিস্ত্রী’র উদ্যোগে।
‘ব্ল্যাকআউট’ এ অভিনয় করেছেন শিল্পী কফিল আহমেদ, ধ্রুব এষ, তিনা, বর্ষা বিভাবরী, চারুকলার দাদু বা এমন কিছু মানুষ, যারা কোনোদিন অভিনয়ের মানুষ নন। কিন্তু প্রধান দুই চরিত্র আমি নিয়েছিলাম আমার চোখে থাকা দুই অ-বাজারি কিন্তু শক্তিশালি তরুণ অভিনেতাকে, যাদের একজন তানভীর হাসান, অন্যজন রাহুল আনন্দ। একজন তরুণ আর্টিস্ট, আরেকজন তরুণ কবি। এককথায় ‘ব্ল্যাকআউট’ হচ্ছে, অমীমাংসিত রজনীতে গল্প, দুই বন্ধুর। তাদের একজন তানভীর হাসান, আজ চলে গেল।
তানভীর, আমি মর্মাহত। তাই বিদায় জানাতে পারছি না।’’
শুধু নাট্য ও চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত মানুষরাই নয়, তানভীরের অকাল প্রয়াণে শোক জানাচ্ছেন বিজ্ঞাপন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত অনেকেই।
ছবি: কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুরের ফেসবুক ওয়াল থেকে