ঘটনার দীর্ঘ একযুগ পরেও কার্যকর হয়নি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায়। নিম্ন আদালতে দণ্ড পাওয়া ১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদী পক্ষের করা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। ঠিক কবে থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হবে সেটাও বলতে পারছে না কোন পক্ষই।
এ জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদি ও আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. মতিউর রহমান। অবিলম্বে হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এমএ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রকাশ্য দিবালোকে আহসান উল্লাহ মাস্টারকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার সঙ্গে খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আরও একজন।
এই মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী কাজী সাজাওয়ার হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, ‘১১ আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদী পক্ষ থেকে নিয়মিত আপিল করা হয়েছে। সেই আপিল এখন আপিল বিভাগের শুনানিতে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।
মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের করা আপিলের উপর শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ১৫ জুন ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনকে খালাস দিয়ে রায় দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
সেসময় হাইকোর্ট এই হত্যাকাণ্ডকে ‘মাসকিলিং’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন ‘‘তারা হত্যা করেছে একটি আদর্শকে। আজকের সমাজে আহসান উল্লাহ মাস্টারের মত আদর্শবান রাজনৈতিক নেতার বড়ই অভাব।”
এ রায়ের কয়েকদিন পর ২১ জুন রাষ্ট্রপক্ষের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায় স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানো হয়।
সে ধারাবাহিকতায় ওইবছরের ১৭ জুলাই ১১ আসামিকে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিষয়ে ‘নো অর্ডার’ আদেশ দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে বলেন।
২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে তাদের মধ্যে মাত্র ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। তারা হলেন: নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।
আর ৭ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। এরা হলেন: মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় মিয়া, জাহাঙ্গীর (পলাতক), মশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম। সেই সঙ্গে আসামি নুরুল আমিনকে বিচারিক আদালতের দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া ১১ জন হলেন: আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির।