খানিক পর পর গ্যালারি থেকে গর্জন শোনা গেল। মিরাজ-তাইজুলদের জোরালো আবেদনের সঙ্গে তাল মেলান দর্শকরাও। বার বার রিভিউ নিয়ে আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করা যায়নি। বাংলাদেশও জিততে পারেনি মিরপুর টেস্ট। ৪ উইকেটের হারে ১-১ সমতায় শেষ হলো সিরিজ।
বাংলাদেশের দেয়া ১৩৭ রানের লক্ষ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চতুর্থ দিনের চা-বিরতির পরই পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। গ্লেন ফিলিপস ৪০, মিচেল স্যান্টনার ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন। প্রথম ইনিংসে ফিলিপস ৮৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে কিউইদের লিড এনে দিছিলেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হতে পারতেন রানের খাতা খোলার আগেই। প্রথম বলেই স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ তোলেন। কিন্তু তা জমাতে ব্যর্থ হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
বাংলাদেশ: ১৭২ ও ১৪৪ নিউজিল্যান্ড: ১৮০ ও ১৩৯/৬
৫১ রানে সফরকারীদের তখন ৫ উইকেট। পরে ড্যারেল মিচেল আউট হলে নিউজিল্যান্ডের স্কোর হয় ৬৯/৬। তখনও জয় থেকে ৬৮ রান দূরে। আর কোনো উইকেটের পতন ঘটেনি। দারুণ জুটি গড়ে ফিলিপ-স্যান্টনার এনে দেন জয়। সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচলে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচে দারুণ ফিনিশিং করেন এ দুই ব্যাটার।
মধ্যাহ্ন বিরতির পর কিউইদের প্রথম উইকেট তুলে নেন শরিফুল ইসলাম। ১৫ বলে ২ রান করা ডেভন কনওয়েকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এ পেসার।
তিনে নামা কেন উইলিয়ামসনকে উইকেটে থিতু হতে দেননি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। চলতি সিরিজে চার ইনিংসে তৃতীয়বার উইলিয়ামসনকে আউট করেন তাইজুল। ২ চারে ১১ বলে ২৪ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন অভিজ্ঞ ডানহাতি ব্যাটার।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হেনরি নিকোলসও। দলীয় ৩৩ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার হন নিকোলস। এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ১০ বলে ৩ রান করেন ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার।
দলীয় ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা কিউইদের আরও দুই উইকেট তুলে নেন তাইজুল-মিরাজ। ৬০ বলে ২৬ রান করা টম ল্যাথামকে ফেরান মিরাজ। টম ব্লান্ডেলকে আউট করেন তাইজুল। ৬ বলে ২ রান আসে ব্লান্ডেলের ব্যাট থেকে।
সকালে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল ২০০ থেকে ২২০ রানের লিড। বাজে ব্যাটিংয়ে সেটি সম্ভব করতে পারেনি স্বাগতিকরা। আগের দিনের ২ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাটিং শুরু করে স্বাগতিকরা দেড়শ ছোঁয়ার আগেই গুটিয়ে যায়। সকালের সেশনের পুরোটাও খেলতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থামে ১৪৪ রানে। প্রথম ইনিংসে কিউইদের চেয়ে ৮ রানে পিছিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। টাইগার ওপেনার জাকির হাসান ফিফটি তুলে নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হন। ৮৬ বলে ৫৯ রান করেন ৬টি চার, ১টি ছয়ের সাহাজ্যে।
তাইজুল ইসলাম কিছুটা লড়াই করে দেড়শর কাছে নিয়ে যান দলকে। অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।
কিউই বাঁহাতি স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেল একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। মিচেল স্যান্টনার তিনটি ও টিম সাউদি একটি উইকেট নেন।
জাকির হাসান ও মুমিনুল হক চতুর্থ দিনের সকালে নেমে ভালোই ব্যাট করছিলেন। তাদের জুটি ভাঙার পর আরও মুশফিকুর রহিম ও শাহাদাত হোসনে দীপুও ফিরেছেন সাজঘরে। দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
দুই অঙ্ক ছুঁয়ে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন মুমিনুল হক। বাঁহাতি স্পিনার অ্যাজাজ প্যাটেলের সাধারণ এক ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে হলেন এলবিডব্লিউ। ব্যাটেই লাগাতে পারলেন না বল। আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে আম্পায়ার আউটের সংকেত দেন। এতটাই পরিষ্কার আউট ছিল যে রিভিউ নেয়ার কথা ভাবতে হয়নি।
১০ রান করে মুমিনুল ফিরেছেন সাজঘরে। মিরপুুর টেস্টের চতুর্থ দিনের সকালে দলীয় ৭১ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মুশফিক (৯) ও শাহাদাত (৪) ফিরে যান দলের রান একশ ছোঁয়ার আগেই। ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট পড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। মেহেদী হাসান মিরাজ (৩) ও নুরুল হাসান সোহান (০) একই ওভারে আউট হলে একইশর আগেই সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। টেলএন্ডারদের মধ্যে নাঈম হাসান ৯ ও শরিফুল ইসলাম ৮ রান করে তাইজুলকে সঙ্গ দেন।
৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের তৃতীয় দিন শেষে ৮ রান সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ৩৮ রান। খেলা বন্ধ হওয়ার আগের বলে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশ অধিনায়ক করেন ১৫ রান। তার আগে মাহমুদুল হাসান জয় ২ রান করে ফেরেন সাজঘরে।
গ্লেন ফিলিপসের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮ রানের লিড নেয় নিউজিল্যান্ড। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি ছুঁতে পারেননি কিউই ব্যাটার। ৭২ বলে ৮৭ রানের ইনিংস খেলে শরিফুল ইসলামের বলে আউট হন।
ওই ওভারেই টিম সাউদি ফিরলে ১৮০ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করেছিল ১৭২ রান।