উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীদের শারীরিক মানসিক নিরাপত্তা এখন বাংলাদেশে এখন একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন। নারীদের প্রতি নির্যাতনের ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনভাবে নারীর চলাফেরা করতে না পারাটা সামাজিক অবক্ষয়ের লক্ষণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সামাজিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে সামগ্রিক উন্নয়নকে মূল্যায়ন করা যায় না।
অতি দুঃখের হলেও বলতে হয়, বর্তমানে নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে ‘ধর্ষণ, ধর্ষিতা, ধর্ষক’- এ শব্দগুলো এত বেশি উচ্চারিত হয়, যা এ সমাজের জন্য লজ্জাজনক। কিন্তু শুধুমাত্র ‘নির্যাতন, নির্যাতিতা’- শব্দ দিয়ে চলমান ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। একজন নারী হয়ে আরেক নারীর প্রতি ধর্ষণ শব্দটি উচ্চারণে ব্যথিত হয় মন। নিজের বিবেকবোধের কাছে পরাজিত হয় নারী সমাজ।
অনেক হতাশাজনক এ পরিস্থিতিতে তনু রূপার মতো ঘটনার আড়ালে তবুও হারিয়ে যায়নি নুসরাত। এটা এক ধরনের আশার আলো। প্রধানমন্ত্রী নির্যাতনকারী অধ্যক্ষ সিরাজসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করেননি। নুসরাত অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে। তবে তার সে প্রতিবাদকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশ প্রশাসন বিশেষ করে পিবিআই শতভাগ সফল করেছে। এরপর বিচারের দায়ভার এখন আদালতের। এ ঘটনাতে মানুষের আস্থা আর বিশ্বাস যে, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি না দেখলে নুসরাতও হারিয়ে যেত তনু রূপাসহ হাজারো ঘটনার মতো।
সারাদেশ চেয়েছিল আর কোন নারী যেন নুসরাতের মতো না হয়। কিন্তু থামেনি মানুষরূপী নরপশুদের বর্বরতা। আবারও গণধর্ষণের পর চলন্ত বাসে হত্যা করেছে নার্স তানিয়াকে টাঙ্গাইলে। ধর্ষকরা ধর্ষণের পর মেয়েটির মাথা থেতলে দিয়ে হত্যা করেছে। এই ঘটনা কতটা পাশবিক তা অকল্পনীয়। পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু তানিয়ার বিষয়ে নির্বাক তার হাসপাতালসহ নারী সংগঠনগুলো। মানবিকতা যদি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে তবে ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি থাকবে না আর। তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে।
তবে এমন হিংস্র পাশবিকতার শিকার হয়ে নারীরা যে ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে পড়ছে ঘরে বাইরে। সুতরাং এ ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে নারীদের মুক্তির পথ করে দিতে হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে। নিরাপত্তা দিতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
কিন্তু নির্মম সত্য হলো যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তদারকি থাকবে না ততক্ষণ নারীদের নিরাপত্তা ন্যায়বিচার পাবার স্থানটি তৈরি হবে না। যা প্রমাণিত হয়েছে নানাভাবে। তিনি আশা জাগানিয়া বাঁশি হয়ে আছেন বলেই নুসরাতের মামলার তদন্তে উঠে এসেছে লোমহর্ষক ঘটনা। দোষীদের ধরতে তৎপর ছিল আইন সংস্থা।
দেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রতিটি সেক্টর তার গতিতে চলার কথা। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতি প্রভাবশালীদের দাপটে সাধারণ মানুষ আস্থাহীন। তাই যে কোন ঘটনাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া সমাধান প্রত্যাশা করে না।
তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর এ বাংলাদেশের সব কিছু একক ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়া ইতিবাচক নয়। নারী নির্যাতনসহ সব অপরাধের ঘটনা খবরে উঠে আসে না কিংবা যা খবর হয় তার সব যে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে তা কিন্তু নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিচার পাবার আগেই অঙ্কুরে বিনাশ ঘটে ধর্ষণ, হত্যাসহ বিবিধ অপরাধের অভিযোগের। বিচারের প্রক্রিয়া হয় বাধাগ্রস্থ।
সব কিছু মিলে কঠোর আইন থাকার পরেও কমেছে না ধর্ষণের মতো নারী নির্যাতনের ঘটনা। হয়তো বা তানিয়ার মতো আবারও কারো জীবন চলে যাবে বিকৃত মানসিকতার কোন পুরুষের হাতে। তাই দেশের নারীদের ঘরে বাইরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ অত্যাবশক। আর সে পদক্ষেপকে গতিশীল করার একমাত্র কাণ্ডারি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন নারী মানে কন্যা জায়া জননী। তাই চাই না আর কোন নারীর ধর্ষণের খবর সংবাদপত্রের শিরোনাম হোক। শুধু চাই কন্যা জায়া জননী হিসাবে নারীর নিরাপদ জীবন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)