শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার রায়ে চারজনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানার দণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন, রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসআর হাউজের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে আবদুস সালাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন এবং ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জাফর আহমেদ শাকি। তাদের প্রত্যেকের দায়িত্বে চরম অবহেলার কারণে পাইপে পড়ে জিহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে। আদালতের এই পর্যবেক্ষণে যথাযথ কারণ উঠে এসেছে বলে আমরা মনে করি। কর্তৃপক্ষ কতোটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে শিশুদের খেলার মাঠে পানির পাম্প অরক্ষিত অবস্থায় খোলা থাকতে পারে তা সহজেই বোধগম্য। এছাড়া জিহাদকে উদ্ধারের সময় উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের অদক্ষতার বিষয়টিও সবার সামনে এসেছে। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে শিশু জিহাদ শাহজাহানপুরে রেলওয়ে মাঠের পাশে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যাওয়ার পর ২৩ ঘণ্টার অভিযানে তাকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। তাদের উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণার পরে ২৭ ডিসেম্বর বেলা তিনটার দিকে কয়েকজন সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী পাইপের ভেতর থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করে। এতে স্বাভাবিকভাবেই উদ্ধারকাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা ও সক্ষমতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও চেষ্টার কোনো কমতি তাদের ছিল না। আমরা মনে করি, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতির সঙ্গে জনগনের সেবার মানসিকতা সম্পন্ন অভিজ্ঞ লোকবল প্রয়োজন। কিন্তু সেটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। তাছাড়া এই দুর্ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষ যে এ বিষয়ে আগের চেয়ে সতর্ক হয়েছে এমন কোনো নজির নেই। এখনো রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এমন অসংখ্য খোলা ম্যানহোল, পানির পাম্পের খোলা পাইপ ইত্যাদি দেখা যায়। অনেক সময়ই এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু এগুলোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই সাধারণ মানুষের জন্য দু:খজনক বাস্তবতা। আর কতো প্রাণ গেলে তাদের এই উদাসীনতার অবসান হবে তা বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি, আদালতের পর্যবেক্ষণ শুধু এই ঘটনা নয় বরং অন্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এবার আদালতের এই পর্যবেক্ষণকে আমলে নিয়ে সবার সচেতনতা এবং দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হওয়ার সময় এসেছে বলেই আমরা মনে করি।