১৯৯৫ সালের কথা। জনপ্রিয় জলের গান ব্যান্ডের গায়ক রাহুল আনন্দ তখন ছিলেন চারুকলার ছাত্র। একেবারেই কম বয়স, দাড়িগোঁফও ছিল না। পহেলা বৈশাখের আগের দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে চারুকলার বকুল তলায় যন্ত্র সংগীতের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। তখনও জানতেন না তার জন্য দারুণ একটা মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়ার পর প্রায় রাতেই সাদাকালো টেলিভিশনে বিটিভিতে যেই মানুষটাকে বাঁশিতে চন্দ্র কোষ রাগ বাজাতে শুনতেন মুগ্ধ হয়ে, সেই বারী সিদ্দিকীকেই দেখলেন প্রিয় বকুল তলায়।
প্রিয় শিল্পীকে কাছ থেকে দেখার আগ্রহে মঞ্চের কাছে গেলেন রাহুল আনন্দ। একেবারে সিঁড়ির কাছে যেতেই বারী সিদ্দিকী রাহুল আনন্দকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘এই ছেলে তুমি কি এখানের ছাত্র?’ রাহুল সম্মতি জানাতেই বারী সিদ্দিকী বলে উঠলেন, ‘আমার স্যান্ডেল জোড়া দেখে রেখো, আমি বাজিয়ে আসি।’ সেদিন দেড় ঘণ্টা বাঁশিতে সুর তুলেছিলেন তিনি। আর ততক্ষণ রাহুল আনন্দ বারী সিদ্দিকীর স্যান্ডেল জোড়া আগলে অপেক্ষা করেছেন গুরুর জন্য। রাহুল আনন্দ জানান, এরপর যখন বারী সিদ্দিকীর সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল, তখন পরিচয় দিয়েছিলেন, ‘আমিই সেই ছেলেটি, বকুল তলায় আপনার স্যান্ডেল জোড়া দেখে রেখেছিলাম।’
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথোপকথনে রাহুল আনন্দ জানান, শিক্ষা জীবন বারী সিদ্দিকীর কাছেই শুরু। তবে এই শিক্ষা শুধু সংগীত শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। পোশাক, খাবার, মানুষের সাথে কথা বলা-সব কিছুই বারী সিদ্দিকীর কাছ থেকেই শিখেছেন রাহুল আনন্দ। তিনি নিজে খুব রাগী ছিলেন। কিন্তু সব সময় রাহুল আনন্দকে বলতেন, মানুষের সঙ্গে রাগ করে কথা না বলার জন্য। একদিন রাহুলকে কাছে ডেকে হাসি দিয়ে বললেন, ‘ফলো মাই অ্যাডভাইস, ডোন্ট ফলো মি।’
রাহুল বলেন, এর আগেও বারী সিদ্দিকী অনেক বার হাসপাতালে গিয়েছেন, ফিরে এসেছেন। তাই এবার ভর্তি হওয়ার পরেও মনে বিশ্বাস ছিল যে তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু হাসপাতালের একজন ডাক্তার ডেকে নিয়ে তার অবস্থা জানালেন। সেবারই প্রথম কেঁদেছেন রাহুল আনন্দ।
রাহুল আনন্দ বলেন, যখনই খারাপ লাগতো বা কোথাও আটকাতেন, যাওয়ার একটা যায়গা ছিল। বারী সিদ্দিকীর কাছে গেলে আশ্রয় পেতেন তিনি। রাহুলের এখন একটাই প্রশ্ন, ‘আমি এখন কোথায় যাব?’