নিজ দেশ সিরিয়ায় যখন তাড়া করছে মৃত্যু আতংক ঠিক তখন একটু নিরাপদ জীবনের আশায় ঠিকানা খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন অন্যত্র। কিন্তু হয়নি। চোখের সামনে স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যু দেখেছেন, কিন্তু হাত বাড়িয়ে কিছুই করতে পারেননি।
‘এর থেকে বেদনার আর কি থাকতে পারে!’ বিশ্ব বিবেকের কাছে এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে নিহত শিশু আয়লানের বাবা আব্দুল্লাহ তুলে ধরেছেন তার কষ্ট আর বেদনার কথা।
সিরিয়া থেকে তাড়া করা মৃত্যকে পেছনে ফেলতে সাগরপাড়ি দিয়ে তুরস্ক থেকে যেতে চেয়েছিলেন গ্রিসে। সেই আশায়, স্ত্রী এবং দু’ সন্তানকে সঙ্গী করে নৌকায় ওঠার পর কিছুদূর যেতেই সামুদ্রিক ঢেউ উল্টে দেয় আবদুল্লাহদের বহনকারী নৌকা।
সেই বিভীষিকার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নৌকাটি উল্টে যাওয়ার সাথে সাথে আমি চোখের সামনে স্ত্রী-সন্তানকে ডুবে যেতে দেখি। বারবার হাত বাড়িয়ে চেষ্টা করেছিলাম তাদেরকে বাঁচাতে। কিন্তু আমি পারিনি। চোখেন সামনে তাদের মরতে দেখেছি।
আব্দুল্লাহর পরিবারের মতো হাজারো সিরীয় পরিবার মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে সুমুদ্র পাড়ি দিয়ে খুঁজে পেতে চাইছে নতুন জীবনের সন্ধান।
এবছর ইউরোপে নতুন আবাস খুঁজতে যাওয়া এমন হাজারো অভিবাসী সাগরে মৃত্যু বরণ করেছেন।
নৌকা ডুবে যাওয়ার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রথমে একটি ঢেউ আমাদের নৌকাটিকে ডুবিয়ে দিচ্ছিলো। আমি চেষ্টা করি হাল ধরতে, কিন্তু আরও একটি বড় ঢেউ আসলে আমার সেই শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
তিন বছরের শিশু আয়লানের মৃত্যু যখন থমকে দিয়েছে বিশ্ব বিবেক তখন আব্দুল্লাহ বলছেন: আমার বাচ্চাটি ছিলো বিশ্বের সব থেকে সুন্দর শিশু। সে এতটাই চঞ্চল ছিলো যে প্রতিদিন সকালে উঠে সে আমার সাথে খেলা করতো।
তাকেও সন্তানদের সঙ্গে সমাহিত করার আর্তি জানিয়ে আব্দুল্লাহ বলেন: ‘আমি এখন তাদের কবরের পাশে বসে থাকবো। তাতে করে যদি কিছুটা দু:খ লাঘব হয়।’