র্যাম্প , বিলবোর্ড ও বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে পরিচিতি পান তানজিন তিশা। এরপর ইমরানের ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ মিউজিক ভিডিও’র মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। পা মাড়ান টিভি নাটকে। সেখানেও নিজেকে তুলে ধরেছেন নানামাত্রিক চরিত্রের মাধ্যমে। এরপর তিশাকে চলচ্চিত্রে দেখা যাবে এমনটা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। সম্প্রতি তিশা কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের বিনোদন বিভাগে…
কিছুদিন আগে আপনি কাজ থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। এরপর একমাস দেশের বাইরে ছিলেন, কেন?
কলকাতায় গিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত কোনো বিষয়ে নয়, কাজের জন্যই গিয়েছিলাম। কাবেরি মেহেদির বিজ্ঞাপনের শুটিং সেখানে হয়েছিল। খুব ভালো লেগেছে কাজটি করে। শিগগির প্রচারে আসবে বিজ্ঞাপনটি। কলকাতার নির্মাতা সনক মিত্র বিজ্ঞাপনটি বানিয়েছেন। কলকাতায় বিজ্ঞাপনের কাজ শেষ করে ওখান থেকে আবার নেপাল চলে যাই। তানিম রহমান অংশু ভাইয়ের নির্দেশনায় একটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ করি। নেপালের একটি ছেলে মডেল ছিল আমার সহশিল্পী। অংশু ভাই নির্মাণে ছিলেন বলেই কাজটি করেছিলাম। তাছাড়া আমার মিউজিক ভিডিওতে কাজ নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ নেই।
নাটকে ব্যস্ততা নেই?
এইতো কদিন আগে দুটো নাটকে কাজ করলাম। দু-টিতেই আমার সহশিল্পী তৌসিফ। এছাড়া ‘অন্ধকারে অন্তরালে’ নামের ইরফান সাজ্জাদের সঙ্গে একটিতে কাজ করলাম। বান্নাহ ভাইয়ের নির্দেশনায় ‘চশমায় লেগে থাকা ভালোবাসা’ নামে অসম্ভব সুন্দর গল্পের আরেকটি নাটকে কাজ করলাম। আগামী ভালোবাসা দিবসে আমার কয়েকটি নাটকে প্রচার হচ্ছে। এরমধ্যে ‘মনজুড়ে’ নামের একটি নাটক নিয়ে খুব আশাবাদী। আফরান নিশো ভাইয়ের সঙ্গে একটি শর্টফিল্ম করেছি। ওটাও প্রকাশ পাবে শিগগির।
মডেলিং করছেন না?
মডেলিং করছি খুব কম। সেগুলো টুকটাক ফটোশুটের কাজ। আসলে আমি এখন পুরোপুরি অভিনয়ে মনোযোগী। সব কাজের চেয়ে অভিনয়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। অভিনয়কে নিজের মধ্যে ধারণ করছি।
প্রায় শোনা যায়, আপনি চলচ্চিত্রে আসছেন…?
চলচ্চিত্র নিয়ে আমার সঙ্গে যখনই কথা সেটা ফলপ্রসূ হওয়ার আগেই নিউজ হয়ে যায়! আজব না? তবে ‘ভবঘুরে’ নামের ছবিতে কাজ করতাম এটা সত্যি। দেশের বাইরে শুটিংয়ের কথা ছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতায় সবকিছু গোলামাল পাকিয়ে গেছে। আর কলকাতায় গিয়ে ফেসবুকে চেকইন দিলেই অনেকেই ভাবে আমি বোধহয় জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি করতে যাচ্ছি! কিন্তু না, আমি রেগুলার কলকাতা যাই।
কিন্তু জাজ মাল্টিমিডিয়ার নায়িকা হয়ে আপনার সিনেমা করার কথা ছিলোতো?
আংশিক সত্য, পুরোপুরি নয়। আগে বলি আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের। সবকিছু চিন্তা ভাবনা করেই আমি যেকোনো প্রজেক্ট হাতে নেই, নইলে মন যা চায় তেমন কাজ করা মেয়ে আমি নই। হ্যাঁ, জাজ মাল্টিডিয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। কলকাতার নির্মাতা রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে দুটো ছবি নিয়ে আলাপ ও দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি, মিম আপু আরো অনেকেই সাথে ছিল। একটা ছবির গল্প আমার কাছে ভালো লাগেনি, সেজন্য ওই মিটিংয়ে বসেই ‘না’ করেছিলাম। জাজের আজিজ ভাই, রাজ চক্রবর্তী সবাই ওখানে বসা ছিল।
একটি ছবির গল্প পছন্দ হয়নি বলছেন, তাহলে অন্য ছবিটা করলেন না কেন?
হয়তো পরেরটি কোনো কারণে আমার সঙ্গে মেলেনি তাই করা হয়নি। এটা কোনো ব্যাপার না। একটা কাজ হবে, একটা না হবে; এটা কমন। আর একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি নেই। কখনো কোনো চুক্তি ছিলও না। আগামীতে কোনো চুক্তি হবে কিনা জানিও না। যেটা বললাম এটা গত বছর ঘটনা। তারপরেই আমি গ্যাপ নিয়েছিলাম।
বড়পর্দায় তাহলে শিগগির দেখা মিলছে না, তাইতো?
চলচ্চিত্র নিয়ে আমি এখন খুব চিন্তিত নই। অভিনয়ের প্রয়োজনে যদি চলচ্চিত্র করা লাগে তাহলে করবো। আমি এখন অভিনয় নিয়ে চিন্তা করি। যদি কোনো সিনেমার প্রস্তাব আসে, ভালোমন্দ সবদিক যাচাই করবো। তখন যদি মনে হয় হ্যাঁ আমি পারব, সেসময় আমি ছবিটি করবো। আমার ইচ্ছে ছিল বাণিজ্যিক ছবি দিয়ে আমার ফিল্মি ক্যারিয়ার শুরু করব। কিন্তু এখন ওই ইচ্ছেটা নেই। অভিনয়ের প্রয়োজনে বাণিজ্যিক নয়, এখন যদি আমাকে আর্টফিল্ম দিয়েও ফিল্ম ক্যারিয়ার শুরু করতে হয়ত, তারপরেও আমি কাজ করব। পুরোটাই অভিনয়ের ওপর নির্ভর করছে।
কোন নায়কের সঙ্গে কাজ করতে চান?
শাকিব ভাই খুব কাজ করছে, আরিফিন শুভও ভালো করছে। তাদের দুজনকেই এগিয়ে রাখবো। তাদের দুজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে সহশিল্পী হিসেবে পেলে একটু বেশি খুশী হবো। এছাড়া বাকি যারা কাজ করছেন তাদের সঙ্গে কাজের ইচ্ছে রয়েছে। এমনকি বর্তমান প্রজন্মে অনেকেই কাজ করছেন। তাদের সহশিল্পী হয়ে কাজ করতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমার জেনারেশনকে আমি তো প্রাধান্য দেবই। কলকাতার কেউ হলেও কাজ করতে আমার আপত্তি নেই। এটা পুরো কাজের মানের ওপর নির্ভর করছে।
এই ক’বছরের ক্যারিয়ারে নিজেকে নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ভুলভ্রান্তি সবারই থাকে। আমারও হয়তো কিছু ছিল। আর কাজ নিয়ে আমি এখন যতটা সিরিয়াস এই সিরিয়াসনেসটা যদি আরো দু’বছর আগে থাকতো তাহলে আমার পজিশনটা আরো ওপরে থাকতো। কিন্তু এখন যে আমি থেমে আছি তা নয়, আমার সময় চলে গেছে এমনটাও নয়। আমি সিরিয়াসভাবে কাজ করে যেতে চাই। নির্মাতারাও আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন। ভালো ভালো প্রজেক্ট আমার হাতে আসছে। আমার মনে হয় এভাবে কাজ করে গেলে কেউ আমাকে আটকে রাখতে পারবে না।
কণ্ঠশিল্পী হাবিবের সঙ্গে ব্রেকাপের পরেই কী কাজের প্রতি এতো সিরিয়াস মনোভাব তৈরি হলো?
না, তা নয়। এর আগেও আমি সিরিয়াস ছিলাম। কিন্তু অভিনয়টা কি সেটা বুঝতে সময় লাগে। কীভাবে অভিনয় ভেতরে ধারণ করতে হয়, উপস্থাপন করতে হয় সেটা বুঝতেও সময় লাগে। ম্যাচিউরিটি মানুষকে অনেকদূর নিয়ে যায়। আমার মধ্যে এখন ম্যাচিউরিটি এসেছে।
হাবিবের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক, প্রেম আর ভাঙনে ক্যারিয়ারে ‘নেতিবাচক’ প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
শিল্পী তথা একজন মানুষের জীবনে যাই ঘটুক না কেন, ক্যারিয়ারে প্রভাব পড়ে। এটা ছোট বা বড় ঘটনা যাই হোক না কেন। এখন আর অতীত মনে করতে চাইনা। আর অতীত ভেবে পড়ে থাকার মেয়ে আমি নই। আমার মধ্যে কাজ করার আগ্রহ ছাড়া এখন কিছু নেই। আমি বেশি বেশি মানসম্মত কাজ করতে চাই। ভালো অভিনয় করতে চাই। যার জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে। আর ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বাড়াতে চাইনা।
ফিচার ছবি: আরিফ আহমেদ