অভিনেতা, আবৃত্তিকার, নাট্যঅভিনেতা এই সব পরিচয়ের বাইরে গিয়ে আর একটি পরিচয়ও আছে তার। গায়ক। তার নাম সৈয়দ হাসান ইমাম। নিজের এতসব পরিচয়ের মধ্যে কোন পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করতে সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন?
জবাব দিলেন, ‘সবগুলোই কোনোটাই ঠিক জোর করে করিনি তো। হতেও চাইনি কোনো কিছু, বলা যায়, হয়ে গেছি। কষ্টও বেশি করতে হয়নি, যখন খেলাধূলা করেছি, মন থেকেই করেছি, গানও গেয়েছি সেটাও মন থেকে, অভিনয়টাও উপভোগ করেছি। তাই সবগুলোই আমার ভালোলাগার জায়গা।’
৮০ পূর্ণ করে ৮১তে পা দিলেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। তবে ছোটবেলার জন্মদিন আর এখনকার জন্মদিনের মধ্যে বেশ পার্থক্য টের পান তিনি। বললেন, আমাদের বাস ছিলো একান্নবর্তী পরিবারে। বাড়িতে সেভাবে কখনোই জন্মদিন পালন করা হতো না। শুধু আমার বলে না, কারোরই হতো না। বিয়ের পর আমার স্ত্রী আমার জন্মদিন পালন করে, বাসায় বিশেষ রান্নাবান্না করে। অনেক সময় আমার নিজেরই জন্মদিনের কথা মনে থাকে না। এই যেমন আমার স্ত্রীর (লায়লা হাসান) জন্মদিনটাও আমি ঠিকঠাক মনে রাখতে পারি না। অবশ্য ও তেমন একটা অভিযোগও করে না।
সময় বদলায়, সেই সাথে সাথে বদলে যায় প্রজন্মও। নিজেদের সময়ে যে তরুণ প্রজন্ম দেখেছেন আর এখনকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও পার্থক্য করলেন এই বর্ষীয়ান অভিনেতা। বললেন, আমরা যখন তরুণ, তখন ইংরেজ আমল ছিলো। আমরা শাসন-শোষণ দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। এখনকার প্রজন্মতো আর সেসব পাচ্ছে না। তাদের সংগ্রামও তেমন করতে হচ্ছে না। ফলে ধৈর্য অনেক কমেছে এখনকার প্রজন্মের মধ্যে।
ধৈর্য কমলেও এখনকার প্রজন্মকে ইতিহাস জানারই আহবান জানান এই গুণী অভিনেতা। বললেন, আমাদের সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানের ছেলেরা পশ্চিম-পাকিস্তান ক্রিকেট টিমে খেলারিই সুযোগ পেতো না। তার মানে এই না যে তখন যোগ্য ছেলেরা আমাদের দেশে ছিলো না। সেই আমরাই এখন পাকিস্তানকে ক্রিকেট খেলায় হোয়াইট-ওয়াশ করছি। সে সুযোগও কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধই এনে দিয়েছে। ইতিহাসটা যদি এখনকার প্রজন্ম মনে রাখে তাহলেই তারা তাদের কর্তব্য পালনে আরো বেশি তৎপর হবে।
৮০ বছর পূরনের এই বিশেষ দিনে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই তার, নেই ব্যক্তিগত কোনো স্বপ্ন পূরণের তাগাদাও। তবে দেশকে নিয়ে এখনো কিছু স্বপ্ন এখনো পূরণ করার স্বপ্ন আঁকেন তিনি।
বলেন, আমার নিজের ওভাবে কোনো স্বপ্ন নেই, আকাঙ্ক্ষাও নেই। আমি আনন্দে আছি, এমন আনন্দেই বাঁচতে চাই। তবে স্বপ্ন আঁকি দেশকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে নিয়ে যেসব স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেসবই পূরণ হোক এটাই এখন একমাত্র চাওয়া। চাই দেশকে নিয়ে সেসময়ের কামনা-বাসনাগুলো এখনকার তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও প্রতিফলিত হোক। আগের প্রজন্ম অনেক ত্যাগ করেছে বলেই এখনকার প্রজন্ম এই স্বাধীন দেশ পেয়েছে। তাদের কথা মনে রাখলেই এখনকার প্রজন্ম নিজেদের কর্তব্য উপলব্ধি করতে পারবে।