স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেছেন, স্বাধীনতা পুরষ্কার পেয়েছি আমি, কিন্তু আমার এ পুরষ্কারের দাবিদার দেশের শতভাগ কৃষক। আমি কৃষকদের নিয়ে কাজ করেছি, তারা সফল হয়েছেন বলেই আমার কাজ মূল্যায়িত হয়েছে, সরকার আমার কাজকে মূল্যায়ন করেছে।
রোববার তাকে দেয়া দেশের বিভিন্ন জেলো থেকে আসা কৃষকদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শাইখ সিরাজ এসব কথা বলেন। বিকালে চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দায় এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানে শাইখ সিরাজ বলেন, আমি ক্যামেরাকে শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামীণ কৃষি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কৃষকের সফলতা, সংকট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম অনুঘটকের কাজ করেছে। এতে কুষকরা অনুপ্রাণিত হয়েছে, উদ্বুদ্ধ হয়েছে। কৃষির উন্নয়নের কারণে দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করেছে। কৃষকের হাত ধরেই বাংলাদেশ একদিন উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
তবে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন কৃষকের এই বন্ধু। তিনি বলেন, নিজেদের শ্রম দিয়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদন করছে, অথচ তার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা সুবিধা নিচ্ছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে, এগিয়ে যাবে দেশের কৃষি, দেশ হবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকের কাজকে অনেক সহজ করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি ফসলের বীজ প্রাপ্তিও এখন অনেক সহজ হয়েছে। কৃষক চাইলেই হাতের কাছে সব ধরণের বীজ পেয়ে পাচ্ছে, এগুলোও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।
তিনি আরো বলেন, প্রান্তিক কৃষকদের পাশাপাশি নগর ও শহরের মানুষও সতেজ শাকসবজি পেতে ও পরিবেশকে সবুজ করতে কৃষির দিকে ঝুঁকছে। শহরের মানুষ বাড়ির ছাদে ও আঙিনায় নানা ধরনের বাগান গড়ে তুলছে। তাদের ছাদকৃষি একদিকে মানুষকে যেমন উদ্বুদ্ধ করছে, অপরদিকে শহরের উষ্ণ তাপমাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখছে।
তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত কৃষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তা অব্যাহত থাকবে। বরাবরের মতই তিনি কৃষকের ডাকে সাড়া দিবেন, ছুটে যাবেন মাটির টানে। তিনি হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সকলকেও অভিনন্দন জানান।
এদিন ‘বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটি’ এবং অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘সবুজ বাগান সোসাইটি’র সদস্যগণ বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক কৃষক তাদের প্রাণপ্রিয় শাইখ সিরাজকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। তারা এসময় নিজেদের তৈরি বাহারি রকমের সবজি ও ফলমূল উপহার দেন তাকে।
শুরুতেই বাহারি সবজি দিয়ে তৈরি মালা পরিয়ে দেন কৃষকরা। শাইখ সিরাজ স্বাধীনতা পদক পাওয়ায় নিজেদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন তারা।
জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কক্সবাজারের কৃষক রহমতউল্লাহ বলেন, দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্যারের ভূমিকা অপরিসীম। তার কথা কৃষকের বুকে উৎসাহের বীজ বুনে দেয়। আমার স্বাবলম্বী হওয়ার পেছনেও স্যারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমি কৃষিকাজ করতে গিয়ে যখন পথে বসার উপক্রম হই, তখন তিনি আমার পাশে দাঁড়ান। বিনা শর্তে আমাকে সাত লাখ টাকা দেন, আমি যেন কৃষিকাজে সফল হয়ে ধীরে ধীরে টাকা দেই, তিনি এই কথা বলেন আমাকে। তার কারণেই আজ আমি সফল কৃষক, আজ অনেকগুলো ক্ষেত্রে আমি একজন সফল চাষি।
তিনি বলেন, আমি যে জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছি শাইখ সিরাজ স্যারের দেখানো পথে কাজ করেই তা পেয়েছি। আমার এই পুরষ্কারে তার অবদান অপরিসীম। তাদের রোল মডেল শাইখ সিরাজকে স্বাধীনতা পদক দেয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
অনলাইন ভিত্তিক সংগঠন ‘সবুজ বাগান সোসাইটি’র এডমিন এহতেশাম হক বলেন, শাইখ সিরাজকে দেখেই তারা উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ শুরু করেন। ফেসবুকে তাদের এখন দেড়লাখ সদস্য। যান্ত্রিকতা শহরের মানুষকে মুক্তি দিতে তারা সকল বাড়ির ছাদ সবুজে সবুজে ভরিয়ে দিতে চান। শাইখ সিরাজের উৎসাহেই তারা তাদের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান।
মধু নামের এক কৃষক বলেন, আমাদের শাইখ সিরাজ অনেক কৃষককে উদ্যোক্তা বানিয়েছেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের অনেক কৃষক উদ্যোক্তা হয়ে সফল হয়েছেন, ভূমিকা রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে।
উপস্থিত আরো অনেক কৃষক এভাবে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন।