চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি: দেরিতে হলেও রেফারির বাঁশি বেজে উঠেছে

আওয়ামী লীগের উপ-কমিটি স্থগিত। বাতিল কিনা জানি না। আসলে নেতৃত্ব নির্বাচনের কোন শতভাগ শুদ্ধ, বৈজ্ঞানিক কাঠামো আছে কিনা আমি জানি না। যেভাবেই নির্বাচন করা হোক না কেন ঠিক সেভাবেই ত্রুটি ধরা পরে। এই উপ কমিটিতে ধরা পড়েছে ছাত্রদল, হাইব্রিডসহ সেলফি নেতাদের।

শতকরা কতভাগ অরিজিনাল আর কতভাগ ডুপ্লিকেট নেতা বানানো হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। আসলে যে যায় লংকায় সে হয় রাবণ। অনেক নেতা দেখেছি যারা সেলফির বিরুদ্ধে কথা বলে। কিন্তু সেলফিই তুলতে ভুল করে না।

ছাত্ররাজনীতি ঠিক এমনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এক সময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিলো। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব যাচাই বাছাই, সংযোগ, পরীক্ষা – নিরীক্ষা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতো বলে একাধিক ক্রস চেক হতো। তাই অদক্ষ, অ-সাংগঠনিক, আনফিটরা নেতা তো দূরের কথা কর্মী হিসেবেও সুবিধা করতে পারত না। এভাবে ছাত্র বয়সেই অনেক স্বপ্নবাজ কিন্তু যোগ্যতা প্রমাণে অক্ষমরা নিজেদের অবস্থান সাধারণ ছাত্র- জনতার কাছে কোন পর্যায় রয়েছে তা বুঝে ভবিষ্যৎ এ সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন।

তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করতেন আবার অনেকেই আরও ত্যাগ স্বীকার করে, নিজেদের আরও গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলে রাজনীতিতে মানুষের মনে নতুন করে জায়গা করার চেষ্টা করতেন। আজ দলের কাঠামোর ভিতরে কোনও জায়গায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার শুদ্ধ, স্বীকৃত কোন পদ্ধতি নাই। কারণ, এখন নেতা হতে হলে হাজারো মানুষের মন জয় করার কোন দরকার নাই। শুধু যার হাতে কলম তার মন জয় করাই যথেষ্ট। তাই কেউ আর কর্মী বান্ধব হতে চায় না। সবাই নেতা বান্ধব হতে চায়।

কীভাবে নেতার মন জয় করা যায়, তা করে করে হাইব্রিড নেতারা পরাজিত করছে মাঠের প্রকৃত নেতাদের। আর এভাবেই শিবির, ছাত্রদল, ব্যবসায়ী, কিংবা অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা কলমের খোঁচায় নেতা হচ্ছে এদেশে। নেতৃত্ব নির্বাচনে শুধু মাত্র এই কলম নির্ভর খোঁচা বন্ধ না করলে এই সমস্যার আশু কোন সমাধান দেখিনা।

এবারে আসি রাজপথ কাঁপানো নেতাদের বেলায়। তৃতীয় বিশ্বে রাজনীতি একটা ব্যবসা বলে প্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। অনেকেই এই ব্যবসায় নিজের জীবন, যৌবন উৎসর্গ করেন, অন্য ব্যবসার চেয়ে লাভজনক বলে।

অনেকে পুঁজি লাগান, অনেকে আবার পুঁজি হারান। তারপরে গালি দিয়ে বলেন রাজনীতি খুব খারাপ। যাই হোক, সবাই যে এটাকে ব্যবসা হিসেবে নেন তা কিন্তু না। যুগে যুগে অনেক নেতা তাদের জীবন বাজি রেখে, আদর্শ দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে এই মহান পেশাকে আলোকিত করে গিয়েছেন। তারা মানুষের জন্য কাজ করেছেন, নিজের জন্য নয়।

এ পর্যায় বাহ্যিক আদর্শিক আচরণধারী কর্মী কিন্তু প্রকৃত পক্ষে দলের জন্য তথা দেশের জন্য ক্ষতিকারক এমন কিছু চরিত্র আলোচনা করব। এই দেশে বিভিন্ন দলে এমন নেতা কর্মীর সংখ্যা কমনা। এরা রাজনীতির জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করেন না।

এরা মারাত্মক দল ভক্ত। আমাদের দলে এরা ‘জয় বাংলা’ বলে চিৎকার করে মিছিলের সামনেই থাকে । আপাত দৃষ্টিতে রাজনীতিতে মাঠের জন্য আদর্শ কর্মী তারা। কিন্তু সেখানে জানা অজানা কিছু হিসেব আছে যা আমরা সাধারণ চোখে দেখিনা। এই পেশাদার কর্মীদের অনেকেই দিনের মিছিল মিটিং শেষে, রাতে মাদক ব্যবসা করে, প্রতিবেশীদের জমি- দলীয় পাওয়ার ব্যবহার করে দখল করে। মুজিবকোর্ট পরে তারা রাষ্ট্রবিরোধী অনেক বড় বড় কাজ করে।

কিন্তু তারপরের দিন, দলীয় কার্যালয় সবার আগে সবচেয়ে জোরে জয় বাংলা স্লোগান ধরে। এদের কে কি বলা যায় আপনারাই বলেন।

আদর্শিক কর্মী ? আপাত দৃষ্টিতে তারা হাইব্রিড না, তারা জামায়াত শিবিরও না, তারা পরিশ্রমী এবং ত্যাগী। কিন্তু বৃহৎ দৃষ্টিতে তারা মাদক ব্যবসায়ী, দখলদার, মানুষের সম্পদ আত্মসাৎকারী, ব্যাংক খেলাপি তথা বাংলাদেশের শত্রু । আর দেশের শত্রু কখনোই আওয়ামীলীগ এর আদর্শ কর্মী হতে পারে না। এরা যখন শেখ হাসিনা,শেখ হাসিনা বলে চিৎকার দেয়, মাঝে মাঝে আবার মিডিয়ায় কথা বলে, তখন আমি বুঝি; এদের প্রতিবার নেত্রীর নাম- একবার করে নেয়ার সাথে সাথে একেকটা দোকান কিংবা একটা প্লট কিংবা একজনের কাছ থেকে ধার নেয়া টাকা হালাল হয়ে যায়। শেষ করব এক নেতার মন্তব্য দিয়ে।

সে আমাকে বললো “আমার নামে কিছু লিখে না কেন সাংবাদিক ভাইয়েরা”। আমি বললাম, কেন? সে বলল, “ভাই অনেকদিন ধরে আমার নামে বাজে রিপোর্টিং নাই। এভাবে রিপোর্ট না হলে ভাই, আমার চাঁদার পরিমাণ কমে যাবে। প্লিজ ভাই, রিপোর্ট করান। কারণ যখন আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির রিপোর্ট হয় তখন ভয়ে হাসি মুখে চাঁদার পরিমাণ বেড়ে যায় “। আমি সেদিন এই কথা শুনে নতুন পৃথিবী আবিষ্কার করলাম।

যেখানে ওই রকম একটি রিপোর্ট এ আমাদের ক্যারিয়ার ধংস হয়, সেখানে কারো কারো সমৃদ্ধি হয়। যাই হোক শত অনিয়ম অবিচারের পরও দিন শেষে শান্তি, আমরা দেশরত্নের মায়ায় – ভালোবাসায় বেঁচে থাকা। বেঁচে থাকুক আমাদের সকলের ভালোবাসার,আস্থার, বিশ্বাসের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আর সেই সাথে তিনি আর তার দল, মুক্ত হোক হাইব্রিড, শিবির, সেল্ফি, দখলদার, মাদক ব্যবসায়ী, আর মুখোশ পরিহিত তথাকথিত ত্যাগী, আদর্শিক সাইনবোর্ড ধারীদের হাত থেকে। জায়গা পাক তারাই যারা অনেক জোরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয় কিন্তু মানুষের মনে কোন কষ্ট দেয় না। যাদের স্লোগানে কিংবা মুজিব কোর্টে সাধারণ মানুষের অথবা দলীয় নেতা – কর্মীদের কোন ক্ষতি সাধন হয়না।

যাই হোক, উপ কমিটিতে সুযোগ পেয়ে অনেকেই ফুটবলের মত বল নিয়ে টান দিয়েছেন। কিন্তু দেরিতে হলেও রেফারির বাঁশি বেজে উঠেছে। কিন্তু খারাপ লাগছে তাদের জন্য যারা যোগ্য, ত্যাগী, এবং প্রকৃত আদর্শিক হয়ে এবার স্থান পেলো তারাও তো স্থগিত হলো। তাদের ভবিষ্যৎ কী?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)