দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় উন্নতমানের টিকা তৈরিতে অসামান্য অবদানের জন্য ‘র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার’ পেয়েছেন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। মঙ্গলবার ‘এশিয়ার নোবেল’ খ্যাত এ পুরস্কার জয়ের কথা ঘোষণা করে র্যামন ম্যাগসেসে কমিটি।
আমরা এরই মধ্যে জেনেছি, এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের দরিদ্র দেশগুলোতে নিরাপদ পানীয় জল ও নিরাপদ খাদ্যের অভাবে কলেরা এবং টাইফয়েড রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দেয়। ফেরদৌসী কাদরী ১৯৮৮ সাল থেকে নিরাময়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি.) বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মূলত তিনি ইটিইসি, টাইফয়েড, হেলিকোব্যাকটের পলরি, রোটা ভাইরাস ইত্যাদি মারাত্মক ধরনের সংক্রামক রোগে বিশেষজ্ঞ। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এস ডিগ্রী অর্জন করে চলে যান যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজ শুরু করেন আইসিডিডিআর.বি-তে।
তার সেই কাজের উদ্দেশ্যই ছিল কলেরা রোগ প্রতিরোধে কিভাবে দরিদ্র মানুষের জন্য সস্তা ও কার্যকর টিকা তৈরি করা যায়। কেননা ওই সময় কলেরার বিরুদ্ধে ‘ডকোরাল’ নামে যে টিকা ব্যবহার করা হতো, তা ছিল ব্যয়বহুল। গরীব মানুষের পক্ষে তা পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ড. ফেরদৌসী সেই টিকার পরিবর্তে ‘শানকল’ নামের একটি টিকা তৈরি করেন। যা ছিল অনেক সাশ্রয়ী।
জীবনে এত এত সাফল্য পেয়েও নীরবে কাজ করে যাওয়া এই বিজ্ঞানী আলোচনায় উঠে আসেন গত বছর। ২০২১ সালে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়িকী এশিয়ার ১০০ জন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করে। সেই তালিকায় ড. ফেরদৌসী কাদরীও ছিলেন।
বলা চলে, জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি ব্যয় করেছেন মানুষের জন্য। তার প্রতিটি গবেষণার লক্ষ্যই ছিল অসচ্ছল, দরিদ্র মানুষের সেবা। সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন তিনি। তার আবিষ্কারে আজ বহু মানুষ বিশেষ করে শিশুদের জীবন রক্ষা পাচ্ছে।
ম্যাগসেসের মতো এত বড় পুরস্কার পাওয়ার পর বিজ্ঞানী ফেরদৌসীর কথা আমাদেরকে মুগ্ধ ও গর্বিত করেছে। তিনি ‘র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার’ কমিটিকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বিশ্বের মানুষের মঙ্গলে তিনি তার বাকি জীবন উৎসর্গ করবেন।
আমরাও মনে করি, তার কাছ থেকে মানব জাতির আরও অনেক কিছু পাওয়ার আছে। আগামীতে ড. ফেরদৌসী কাদরী তার দৃষ্টান্ত রাখবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।