করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির মেয়াদ সর্বশেষ ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অন্য সব কিছু খুললেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে না বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও বলছেন: পরিস্থিতি এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উপযোগী হয়নি। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি বার্ষিকী পরীক্ষা না নেওয়া গেলে অটো পাসের চিন্তা মন্ত্রণালয়ের থাকলেও এর মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে: বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে ছয়টি মাত্রা- নীতি নির্ধারণ, অর্থ সংস্থান, নিরাপদে কার্যক্রম পরিচালনা, শিখন, সর্বাধিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী পর্যন্ত পৌঁছানো নিশ্চিতকরণ এবং সুস্থতা, সুরক্ষা ব্যবস্থা বিবেচনা করে এই নির্দেশনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পাঁচ পৃষ্ঠার ওই নির্দেশিকার আলোকে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে তা-ও বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলছে, জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ক সামগ্রিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কখন বিদ্যালয় পুনরায় চালু করা যাবে সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ঐ অনুযায়ী জাতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।
বিদ্যালয় পুনরায় চালুর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে নিরাপদ এলাকা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় চালু করা যেতে পারে। করোনা সংক্রমণ বিবেচনায় কোনো এলাকাকে সরকার ‘রেড জোন’ ঘোষণা করলে সেই এলাকায় বিদ্যালয় খোলা যাবে না। বিদ্যালয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করার আগে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারির কারণে গোটা বিশ্বেই এই পরিস্থিতি বিদ্যমান। তবে উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে অনলাইনের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে এই প্রযুক্তি নির্ভর পাঠ দানের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন স্কুলে না যাওয়ার কারণে শিশুদের প্রাণচাঞ্চল্য স্থবির হয়ে গিয়েছে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও ভাবতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশপাশি শিশুদের মনোজগতের ওপর জোর দিতে হবে এখন। মানসিকভাবে শিশুদের যে পরিবর্তন হয়েছে তার ওপর গুরুত্ব দিয়ে স্কুল খোলার নির্দেশিকা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুদের প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্যবিধি ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা মেনে না চলার কোনো অবকাশ নেই। আমরা মনে করি এই ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনে শিক্ষকদের স্বল্প পরিসরে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, যাতে তারা সহজেই শিশুদের চাপ কমাতে পারে। আমরা চাই শিশুদের কলকাকলিতে আবার মুখর হয়ে উঠুক প্রতিটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সরকারের সিদ্ধান্ত যেনো কার্যকর হয় শতভাগ। এই নির্দেশিকার বাস্তবায়নই পারবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত নাগরিকদের মেধাকে উজ্জ্বলতর বিকাশের দিকে নিয়ে যেতে।