চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

আবরারের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে কি?

আবরার ফাহাদ। ছেলেটাকে কি নির্মমভাবেই না পিটিয়ে মারলো ওর মতো আরও কিছু ট্যালেন্ট ছেলে। যারা পেটালো তারা কিন্তু পেশাদার কোনো সন্ত্রাসী বা চাঁদাবাজ নয়। শুধু সিনিয়র তারা, আর সিনিয়র হলে তথাকথিত র‌্যাগিংয়ের নামে ভাব নিতে হয়- সেই জন্যেই ডেকে নিয়ে একটু বাহাদুরী দেখানো আর কি!

কী দোষ ছিল আবরারের? সে ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিজের মত প্রকাশ করেছিল, এই তো। মত তো যে কেউ প্রকাশ করতেই পারে। তার জন্যে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে? নাকি অন্য কিছু ছিল? কে জানে?

কিভাবে পেটানো হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়েছে, একেকজন ‘বীরসন্তান’। ‘বীরসন্তান’ এ জন্যে বলা যে, যারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন হত্যাকারীরা আবরারকে হত্যা করার পর কোথায় তার লাশ রাখবে, সেটা নিয়ে যখন ছোটাছুটি করছিল তখন তাদের ভাবভঙ্গি ছিল ভাবলেশহীন, যেন তারা কোনো বীরত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেছে। সে জন্যে তাদেরকে পদক দেয়া হবে আর কি। অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে যেন তারা।

এই ‘বীরসন্তান’দের বাবা-মা কারা? তাদের বর্তমান প্রতিক্রিয়া কেন আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা প্রচার করছে না। তাদের চেহারাগুলো দেখানো দরকার জনগণকে। অভিভাবকেরা কোনো দোষ করেননি, কিন্তু তাদের সন্তানরা যা করেছে তাতে তাদের প্রতিক্রিয়া কী? সেটা জানার আগ্রহ অবশ্যই অনেকের আছে। এটাতে তাদেরকে হেয় করার কোনো বিষয় নেই। শুধু একজন বাবা বা মা জানাবেন তার ছেলে পিটিয়ে আরেকজন বাবা-মা’র সন্তানকে মেরে ফেলায় তাদের প্রতিক্রিয়া।

এখন আসল প্রসঙ্গে, এই ‘বীরসন্তান’দের ব্যাপারে অনেকেই হয়তো অনুকম্পা দেখানোর কথা বলবেন, বিশেষ করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা ভুল করে ফেলেছে, এটা স্বীকার যেহেতু করেছে তাদের শাস্তি লঘু করা হোক। কিংবা এই ‘বীরসন্তান’দের বাবা-মায়েরা বলে বেড়াবে-তাদের সন্তান মোটেও এত খারাপ না। খুবই নিরীহ টাইপের ছেলে। সঙ্গদোষে এমনটা করেছে। কিংবা এমনও কথা বলবে তাদের সন্তান ওইদিন পেটানোর সময় ছিল না। সে বাইরে থেকে খেয়ে ফিরছিল হলে, তখন তাকে সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। বা এমনও বলতে পারেন- তার ছেলে আবরারের চিৎকার শুনে দেখতে গিয়ে ফেঁসে গেছে। খুব স্বাভাবিক, এমনটা বলা, কারণ সন্তান তো।

কিন্তু এসব অবেগঘন কথায় যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ‘বীরসন্তান’দের ব্যাপারে কোনো প্রকার শাস্তি কমানোর কথা চিন্তাও করে তা হলে মেনে নিতেই হবে-এ ঘটনা এখানেই শেষ না, এখান থেকেই শুরু। এই আবরারের ঘটনা অনেক মায়ের ‘বীরসন্তান’কে আরো সাহসী করে তুলবে, বীরত্ব দেখাতে তথাকথিত র‌্যাগিংয়ের নামে। র‌্যাগিংয়ের নামে ভয়াবহতার নতুন দ্বারের শুভ সূচনাই করা হবে, যদি শাস্তি চুল পরিমানও কমানো হয়। কারণ তখন ‘বীরসন্তান’রা ধরে নেবে আমার তো কিছু হবে না। ক’মাস জেল, তারপরেই খালাস, বা জামিনে বের হওয়া যাবে। এতে করে আরও কিছু আবরারের মায়ের বুক খালি হবে।

এ পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আবরারের হত্যার ঘটনায়। তাদেরকে হত্যার জন্যে আইনে যে শাস্তি আছে, সেটা যত বড় শাস্তিই হোক তা দিতে হবে। সেটা ওই ‘বীরসন্তান’দের বাবা-মায়েদের যতটা কষ্টেরই হোক না কেন, দিতে হবে সর্বোচ্চ শাস্তি। তা না হলে যদি গল্প ফাঁদা হয় ওই আবরার শিবির করতো, ওর বাবা বিএনপি করতো, সুতরাং যা হয়েছে সেটা ঠিকই হয়েছে, ওদেরকে মুক্ত করে দেও। কিংবা আবরারের বাবা-মাকে চাপ সৃষ্টি করে হত্যা মামলা তুলে নেয়ার মতলব করা হলেও সেটা হবে রাষ্ট্রের জন্য খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত।

আবরারের মায়ের কষ্টের কথা বিবেচনা করে, যে মায়ের স্বপ্ন ছিল আবরারকে নিয়ে আকাশসমান। যে বাবা কষ্টে উপার্জন করা টাকা ব্যায় করে পড়িয়েছেন আবরারকে, তারা যতদিন বাঁচবেন শূন্যতা নিয়ে বাঁচবেন, কষ্ট নিয়ে বাঁচবেন, আবরারের ছোটখাটো স্মৃতি হাতড়িয়ে যাবেন আমৃত্যু, তাদের সেই শূন্যতা কথা ভেবে শাস্তি দিতে হবে সর্বোচ্চ।

আর যেহেতু আমাদের প্রধানমন্ত্রী স্বজন হারানোর বেদনা বোঝেন, নিশ্চয়ই আশাতো করাই যায় তিনি বা তার সরকারের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি এই হত্যা মামলায় কোনো প্রকার পক্ষপাত করার জন্য প্রভাব খাটাবেন না। প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, আবরার হত্যাকরীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবেই।

আমাদের তো শেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই। যিনি অন্ধ নন, বিএনপি-জাতীয় পার্টি-আওয়ামী লীগ বোঝেন না, বোঝেন অপরাধী অপরাধীই। তার কোনো পরিচয় থাকতেই পারে না। খুব দ্রুত সময়ে এর বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, এমন আশা আবরারের বাবা-মায়ের মতো সবার।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)