শহিদ আফ্রিদির আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’ প্রকাশের সূত্র ধরে একটার পর একটা চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত বিষয় সামনে আসছে। নিজের বয়স থেকে সাবেক সতীর্থদের বিষয়ে ইতিবাচক, নেতিবাচক অনেক কথাই বলেছেন বইতে। আফ্রিদির নিজের জীবনের কাহিনীর সঙ্গে নতুন সংযোজন হয়েছে ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টের স্পটফিক্সিং কাণ্ড।
২০০৭ সালে কানপুরে ভারত-পাকিস্তানের একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে গৌতম গম্ভীর ও আফ্রিদির মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। আইসিসির আচরণবিধি ভাঙার দায়ে দুজনই শাস্তি পান।
সেই রেশ ধরা পড়েছে আফ্রিদির বইতেও। যেখানে গম্ভীরের কোনো ব্যক্তিত্ব নেই। শুধু আছে একগাদা আচরণগত সমস্যা- এমনসব মন্তব্য করেছেন আফ্রিদি। পরে মানসিকভাবে অসুস্থ দাবি করে আফ্রিদিকে ভারতের চিকিৎসা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন গম্ভীর।
কিন্তু সেটা ছিল ভারত-পাকিস্তান চিরকালীন দ্বন্দ্বের ছায়া। আফ্রিদি গোল বাধিয়েছেন নিজ দেশের সাবেক গ্রেটদের নিয়ে মন্তব্য করেও। যেখানে জাভেদ মিঁয়াদাদ থেকে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান রয়েছেন।
‘বুম বুম’ তার বইতে এমনকিছু মন্তব্য করেছেন, যেটা বিশ্বকাপের আগে সেদেশের ক্রিকেটে গৃদ্ধযুদ্ধ লাগিয়ে দিতে পারে বলে মন্তব্য পাকিস্তান মিডিয়ার। এনিয়ে তো রোববার ঝাঁঝালো এক সম্পাদকীয়ই লিখেছে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডন’।
লর্ডসের ফিক্সিং ঘটনায় জড়িয়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির, সালমান বাট ও মোহাম্মদ আসিফ। সেই প্রসঙ্গ টেনে নিজের বইয়ে আফ্রিদি জানিয়েছেন, জুয়াড়িদের সঙ্গে স্পট ফিক্সিংয়ে যুক্ত ক্রিকেটারদের এসএমএস চালাচালির কথা তিনি জানতেন। সেটা তৎকালীন কোচ ওয়াকার ইউনিসকে জানিয়েছিলেনও। কিন্তু ওয়াকার তা আমল নেননি।
সেটা নিয়ে নিজের বইয়ে আফ্রিদির তোপ, ‘ম্যানেজমেন্ট কিছুই করেনি। সেই একই গল্প। হয়তো এটা বের হলে কী হবে, সেটা নিয়ে ম্যানেজমেন্ট ভয় পাচ্ছিল। হয়তো তারা তাদের ফেভারিট ক্রিকেটার ও ভবিষ্যত অধিনায়ককে নিয়ে তদন্ত করতে চাইছিল না। ম্যানেজমেন্ট যে কী চাইছিল, সেটা সত্যিই আমি বুঝিনি।’
১৯৯৬ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে নাইরোবিতে জাতীয় দলে অভিষেক হয় আফ্রিদির। দ্বিতীয় ম্যাচেই ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করে নিজের করে নেন সবচেয়ে দ্রুততম শতকের রেকর্ডটি। পাকিস্তানের হিসেবে মাত্র ১৬ বছরে সেঞ্চুরিটি করেছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু আফ্রিদি এখন নিজেই জানাচ্ছেন রেকর্ডটি ছিল ২১ বছর বয়সে!
আফ্রিদি বইতে বিতর্কিত কথা লিখেছেন সাবেক গ্রেট ও ‘বড় মিয়া’ খ্যাত জাভেদ মিঁয়াদাদকে নিয়েও। সেখানে তিনি মিঁয়াদাদকে ‘এ স্মল ম্যান’ বলে উল্লেখ করেছেন। দেশের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যানকে নিয়ে বলেছেন, ‘আমি যেভাবে ব্যাট করি সেটা তার (মিঁয়াদাদ) পছন্দ নয়। এজন্য ১৯৯৯ সালে ভারত সফরের সময় আমাকে নেটেও ব্যাট করার সুযোগ দেননি। পরে আমি সেঞ্চুরি করলে কোচ মিঁয়াদাদ নিজেই আমার কাছে এগিয়ে আসেন, সেটা আমি কখনোই ভুলতে পারব না।’
বিরূপ মন্তব্য করেছেন সাবেক সতীর্থ এবং যার কোচিংয়ে খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন সেই ওয়াকার ইউনুসকে নিয়েও। ওয়াকারকে ‘একজন মাঝারি মানের অধিনায়ক এবং ভয়ানক কোচ হিসাবে’ উল্লেখ করেছেন আফ্রিদি।
সাবেক অধিনায়ক এবং পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আফ্রিদি ‘বিস্ফোরক’ অধিনায়ক বলে উল্লেখ করেছেন এবং এখন সেভাবেই ইমরান মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন বলে মন্তব্য তার। বইতে আফ্রিদি প্রশংসা করেছেন সাবেক কোচ বব উলমারেরও।
তবে বিশ্বকাপের আগে আফ্রিদির এই বই দলের ক্ষতি করতে পারে এবং দেশের ক্রিকেটে এক ধরনের নীরব ‘গৃহযুদ্ধ’ শুরু হতে পারে বলে সম্পাদকীতে লিখেছে ডন।
‘আফ্রিদি হিটস আউট বা আফ্রিদির আঘাত’ শিরোনামে ডন লিখেছে, ‘ক্রিকেটার শহীদ আফ্রিদির বইটি অতীতের নায়কদের বিতর্ককে জাগিয়ে তুলেছে এবং আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করেছে। কঠিন বিশ্বকাপ পরীক্ষায় নামার আগে সব পাকিস্তানির যখন নজর দেয়া প্রয়োজন ইংল্যান্ড সিরিজের দিকে। তখন..!’
ডন আরও লিখেছে, ‘গেম চেঞ্জার কিছু মহিমান্বিত মুহুর্তের উন্মোচন করেছে এবং করাচি ক্রিকেটের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। কিন্তু এটি জাতীয় ক্রিকেটকে পরাজিত করে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধকেও উস্কে দেয়।’