পাহাড়-মরুর দেশের মানুষ আফগানিস্তানের খেলোয়াড়দের নতুন করে পর্বত চেনানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ইংল্যান্ড সেই চেষ্টাও করেনি। একটা সময় দুইশো বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছে যে দেশ তারা হয়ত ছোটখাটো কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না! তাদের কাজকর্ম মানেই এলাহী কারবার। সেটা বুঝিয়ে দিতেই যেন আফগান বোলারদের হেলেদুলে রানের বন্যায় ভাসিয়ে দিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা।
বিশ্বকাপের আগে আফগানিস্তানের বোলিং লাইনআপ নিয়ে কত হইচই। রশিদ খানের মতো লেগস্পিনার, মুজিব-উর রহমানরা যে দলে তাদের বেধড়ক পেটাতে হলেও বুকে সাহস লাগে। কিন্তু ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইয়ন মরগান, জো রুটকে দেখে মনে হল না এনিয়ে কোনো ভাবনা আছে। এক সেঞ্চুরি ও দুই সেঞ্চুরি কাছাকাছি ইনিংসে ছক্কার পর ছক্কার বৃষ্টি বইয়ে দিয়ে আফগানদের জন্য ইংলিশদের লক্ষ্য ৩৯৮ রান!
আফগানদের বেধরক মার খাওয়াতে অবশ্য আড়ালে লাভ হয়েছে বাংলাদেশের। কারণ এই ম্যাচের আগে চলতি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ইনিংস ৩৮৬ রানের, বাংলাদেশের বিপক্ষে এই ইংল্যান্ডেরই। সেই ইনিংসটা আপাতত চাপা পড়ে গেল ইংলিশ অধিনায়কের দানবীয় এক ইনিংসে।
চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছেন মরগান ইংল্যান্ডের রান ২৯.৫ ওভারে ১৬৪। ওভার প্রতি রানরেট সাড়ে পাঁচের একটু বেশি। আগের বলেই গুলবাদিন নায়েবকে মারতে গিয়ে মাত্র ১০ রানের জন্য এবারের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছেন ওপেনার জনি বেয়ারস্টো। অন্যপ্রান্তে জো রুটের রান ৪৫।
মরগান এলেন। কিছুক্ষণ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলেন। প্রথম পাঁচ বলে রান করলেন কেবল ১। এরপর গুলবাদিনের করা ৩২তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে টানা দুই ছক্কা মেরে সেই যে শুরু করলেন, ঝড় শেষ পর্যন্ত থামল ৪৭ ওভারে গিয়ে! ততক্ষণে মাত্র ১৭ ওভারে ইংলিশদের ইনিংসে যোগ হয়েছে ১৯৫ রান!
মরগানের ইনিংসটাকে এককথায় বর্ণনা করতে হলে বলতে হবে কেবলই ছক্কাময়! ৩৬ বলে ফিফটি ছুঁলেন ছয় দিয়ে। সেঞ্চুরি হল ৫৭ বলে, যেখানে থাকল বিশাল এক ছক্কার ছোঁয়া! শেষ পর্যন্ত এই ছক্কার নেশায় লং-অফ দিয়ে মারতে গিয়েই থামে ইংলিশ কাপ্তানের মাত্র ৭১ বলে ১৪৮ রানের ইনিংসটি!
এই ইনিংসে মরগান চার মেরেছেন মাত্র ৪টি। আর ছয়? ১৭টি! ওয়ানডের ইতিহাসে এখন এটাই কোন ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। চার-ছক্কা মিলিয়ে ১১৮ রান কেবল বাউন্ডারি দিয়ে তুলেছেন মরগান!
কেবল মরগানই নন, দলের বাকিদেরও যেন পেয়েছিল ছক্কার নেশায়। মঈন আলি তার ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংসটিতে মেরেছেন ৪ ছক্কা, বেয়ারস্টো মেরেছেন ৩টি। এমনকি যিনি খুব একটা ছয় মারেন না, সেই রুটের ব্যাটও দেখেছে একটি ছক্কা। সবমিলিয়ে মোট ২৫টি ছক্কা। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ! আগের ২৪টি ছক্কার রেকর্ড ছিল ইংল্যান্ডেরই।
মরগানের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেলেও রুট কিন্তু খেলেছেন কার্যকরী ইনিংস। ৮২ বলে রুটের ৮৮ রানের ইনিংসটি মরগানকে সাহস যুগিয়েছে হাত খুলে খেলতে।
আফগানদের বোলিংয়ে সবচেয়ে বেধড়ক মার খেয়েছেন দলের সেরা বোলার রশিদ খান। ৯ ওভারে এই লেগস্পিনার একাই দিয়েছেন ১১০ রান। সফল কেবল দৌলত জাদরান ও অধিনায়ক গুলবাদিন। দুজনেই পেয়েছেন সমান ৩টি করে উইকেট।