সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারেই আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে যদি পাকিস্তান ও তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় কোনো সুফল না দেখা যায়, তাহলে হয়তো আফগানিস্তান এ বছরটাও টিকে থাকতে পারবে না।
তার মন্তব্য গত বছর তালেবানের ব্যাপক হামলার পর আফগানিস্তান কোনোমতে বেঁচে আছে। ২০০১ এর পর ওটাই ছিলো দেশটিতে সবচেয়ে বড় হতাহতের ঘটনা।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শুধু আফগানিস্তানেই নয়, পাকিস্তান এভাবে বেশ কিছু বিদেশী সংঘাতে নাক গলাচ্ছে। দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা বহু বছর ধরেই আন্তর্জাতিক মুজাহিদিন গোষ্ঠীর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করে এসেছে।
শুধু তাই নয়, জঙ্গি সংগঠন আইএসের উদ্ভবের পেছনেও পাকিস্তানের হাত রয়েছে – এমনটাও ধারণা অনেকের।
কিছুদিন আগে দেয়া একটি টিভি সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ঘানি বলেন, ‘পরিস্থিতি আর কতোটা খারাপ হবে? এটা নির্ভর করে আমরা কতোখানি আঞ্চলিক সহযোগিতা ধরে রাখতে পারছি এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে নীতিমালা তৈরিতে কী পরিমাণ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা ও চাপ দেয়া যাচ্ছে তার ওপর।’
অর্থাৎ পাকিস্তানের সহিংসতা থামাতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ।
জঙ্গি দল তালেবানের সর্বশেষ হামলাটি শুরু হয় ২০১৪ সালে। বহু বছর পিছনে যাওয়ার পর অবশেষে পাকিস্তান সরকার জানায় দেশটির পশ্চিম ওয়াজিরিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় তালেবান ও আল-কায়েদার বিশাল ঘাঁটি উচ্ছেদ করা হবে।
সেই আশ্বাস পেয়ে মার্কিন ও ন্যাটো সামরিক বাহিনী মাত্র আফগানিস্তান থেকে তাদের অভিযান কমিয়ে সরে যেতে শুরু করে। সিদ্ধান্ত অনুসারে পাকিস্তান জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে ব্যাপক অভিযান চালায়। ধ্বংস করে অনেকগুলো তালেবান আবাসস্থল, অস্ত্রাগার ও নির্যাতন কক্ষ।
কিন্তু এই অভিযানের ব্যাপারে আগেই সতর্ক করে দেয়া হয়েছিলো জঙ্গিদের। কয়েকশো তালেবান সদস্য অভিযানের আগেই পালিয়ে যেতে সফল হয়।
তাদের মধ্যে অনেকেই সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে। আর এর কিছু সময় পরই নতুন করে শুরু হয় তালেবানের ভয়াবহ হামলা।
যদিও আফগান সরকারের সমালোচকদের মতে, দেশটির ভেঙ্গে পড়ার পেছনে পাকিস্তান নয়, সরকারের নানা ধরণের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতাই দায়ী। যার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তানের রাজনৈতিক বিভেদ, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, সন্ত্রাস দুর্নীতির মতো বিষয়।
তবে সমালোচকরা যা-ই বলুন, বিশেষজ্ঞরা কিন্তু আফগান প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অনেকটাই একমত।
তাদের মতে, তালেবানকে হামলার সুযোগ পাকিস্তানই করে দিয়েছে। সমঝোতায় আসার ব্যাপারে তালেবানকে বোঝাতে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বারবার অনুরোধ করলেও পাকিস্তান কিছুই করেনি বলে দাবি আফগানিস্তানের।