আশি ও নব্বইয়ের দশকে উপস্থাপক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা আনিসুল হক যেখানে গেছেন সেখানেই সবার মন জয় করেছেন নিজের মেধা, যোগ্যতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে। ব্যবসায় সফলতা, বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআই সভাপতি এবং মেয়র হিসেবেও একজন সফল ব্যক্তি ছিলেন আনিসুল হক। বিজয়ের মাসের প্রাক্কালে বড় অসময়ে চলে গেলেন তিনি। তার এই প্রয়াণে সাধারণ মানুষের হাহাকার আর শোকের মাতম চলছে। এতে স্পষ্ট যে ঢাকা উত্তরের মেয়র হিসেবেও তিনি ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দল-মত নির্বিশেষে এমন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব খুবই বিরল। মেয়র হিসেবে তিনি ঢাকা শহরকে পরিবর্তন করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। অপরিকল্পিত এই নগরীকে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল বাসযোগ্য ঢাকা হিসেবে গড়ে তোলার। তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেননি, স্বপ্নের বাস্তবায়নও শুরু করেছিলেন। গণপরিবহন থেকে শুরু করে যানজট, দখলদার উচ্ছেদসহ বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকা গড়তে অল্প সময়ের মধ্যে বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ কারণে ঢাকাবাসীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রিয় ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনুকরণীয় এবং ভরসার স্থল। তবে দুর্নীতিবাজ এবং দখলদারদের কাছে তিনি ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেও জীবনের শেষ সময়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ছড়ানো নানারকম গুজব আমরা লক্ষ্য করেছি। তবে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে রাখতে পারলে ষড়যন্ত্রকারীরা যে পাত্তা পায় না, তারও বড় উদাহরণ আনিসুল হক। এখান থেকে সবার শেখার বিষয় আছে বলে আমরা মনে করি। এমন একজন সফল, স্বপ্নবাজ এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নে দক্ষ জনপ্রতিনিধি দেশ আবার কবে পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই একজন আনিসুল হকের প্রয়োজনীয়তা সবসময় অনুভব করবে বাংলাদেশ। আনিসুল হকের প্রয়োজনীয়তা কখনোই ফুরাবার নয়। তার মতো স্বপ্ন সারথীর অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাহত। আনিসুল হকের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।