চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

আত্মানুসন্ধানের এ সময়ে

চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্পাদকের বক্তব্য

একটি অনুষ্ঠানে সাধারণত প্রধান বা বিশেষ অতিথি থাকে। আজকের অনুষ্ঠানে সেই প্রধান বা বিশেষ অতিথি কে বা কারা? তারা আর কেউ নন, আমাদের সামনে চ্যানেল আই’র যে কর্মীরা বসে আছেন তারা প্রত্যেকেই আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান এবং বিশেষ অতিথি। কারণ, দিনশেষে আপনারা হচ্ছেন সেই হৃদয় এবং মস্তিষ্ক যাদের মেধা ও শ্রমে মাত্র চার বছরের মধ্যে চ্যানেল আই অনলাইন বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যমে বিশেষ একটি জায়গা করে নিতে পেরেছে। আপনাদের অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।

গণমাধ্যম হচ্ছে এমন একটি জায়গা যেখানে প্রতিদিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মূল্যায়ন তাই প্রতিদিনের বিষয়। তারপরও প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর মতো কোনো উপলক্ষ আমাদেরকে আরো বড় মূল্যায়নের সুযোগ করে দেয়। চ্যানেল আই অনলাইনের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণে তাই কয়েকটি কথা বলতে চাই।

প্রথম কথা হচ্ছে, চ্যানেল আই’র মতো দেশের শীর্ষ একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনলাইন অপারেশন দরকার হলো কেনো? এর উত্তরটা আমরা সবাই জানি। ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী যে বিপ্লব এনেছে তাতে এমনকি টেলিভিশনও আর শুধু টিভি বক্সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সবকিছুই এখন স্মার্ট ফোন কেন্দ্রিক। আর টেলিভিশন সেটেও অনেককিছু সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নির্ভর।

সুতরাং অডিয়েন্সের কথা মাথায় রেখে গণমাধ্যম এখন প্রায় পুরোটাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম নির্ভর হয়ে উঠেছে। টেলিভিশনের লাইভ কাভারেজ, যার বড় অংশই আবার মোবাইল কেন্দ্রিক অডিয়েন্স, সেই লাইভ কাভারেজের বাইরে অন্য কন্টেন্টগুলোও আস্তে আস্তে হয়ে উঠছে ওটিটি বা ওভার দ্য টপ ধরণের কন্টেন্ট। এটা আমাদের জন্য এক ধরণের চ্যালেঞ্জ, আরেক ধরণের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে– আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে কীভাবে কতোবেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারি?‘পাঁচ এ ৫’ চ্যানেল আই অনলাইন

শুধুমাত্র অনুগত অডিয়েন্স বাড়ানোর জন্যই যে আমরা ডিজিটালি বেশি উপস্থিতি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি, তা নয়। যেকোনো বিনিয়োগে যেহেতু সেটা উঠিয়ে আনারও একটা বিষয় আছে, এর সঙ্গে বাণিজ্যের বিষয়টি তাই সম্পৃক্ত। বিশ্বব্যাপী যে বিজ্ঞাপন বাজেট, গত ১০ বছরে সেটার গ্রোথ শুধু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। ২০০৯ সালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের মোট বিজ্ঞাপনের ১৭.২ শতাংশ যেতো, এখন সেটা ৩৮.৯ শতাংশ। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতিমাস, প্রতি বছরে এটা শুধু বাড়ছে এবং বাড়তেই থাকবে।

এখানে আমরা যদি বাংলাদেশের কথা বলি, মোবাইল কোম্পানিসহ মাল্টিন্যাশনাল এবং স্থানীয় পণ্য বাজারের ৩০ শতাংশ বিজ্ঞাপনই এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যাচ্ছে। এটা বাড়তির দিকে। এমনকি যে অনলাইন নীতিমালা হচ্ছে, সেটা হলে সরকারি বিজ্ঞাপনেরও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অনলাইনের জন্য বরাদ্দ হবে।

সুতরাং, হোক পত্রিকা কিংবা টেলিভিশন- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না, তার জন্য এখন টিকে থাকা কঠিন হবে।

তবে, এখানে একটি কথা বলতে চাই। আমাদের দেশে বড় সাইটগুলো তার ভিডিও কনটেন্টের জন্য ইউটিউবের উপর নির্ভর করে। আপাতঃ চোখে এটা বড় রাজস্ব দিলেও সিংহভাগই ইউটিউব এবং এখন ফেসবুক ভিডিও কনটেন্টের সুযোগ দেওয়া ফেসবুকই খেয়ে ফেলে। এমনকি পাশের দেশ ভারতেও বড় নিউজ সাইট বা প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিজস্ব সার্ভার এবং অ্যাপ ব্যবহার করে। আমাদের দেশে এখনও কেউ সেই বড় অপারেশনে যাচ্ছে না, যদিও সুযোগ অবারিত।

রাজস্ব প্রশ্নে আর একটি কথা বলে শেষ করবো। বলা হচ্ছে যে, দেশের মিডিয়া একটা সংকটকাল পার করছে। সত্যিই তাই। এর এক কারণ দিনকে দিন ডিজিটালনির্ভর অডিয়েন্স। অন্য একটি কারণ কি এরকম যে, বর্তমান গণমাধ্যমের উপর গণমানুষের এক ধরণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে? আমাদের সেই আত্মানুসন্ধান আজ জরুরি।

দর্শক-পাঠকসহ সবাইকে আরো একবার অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)