গত কয়েক দিনে আমরা বিস্ময়কর একটি ধারাবাহিক খবর লক্ষ্য করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক আত্মহত্যার সংবাদ। সর্বশেষ ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের হুজাইফা রশিদ নামে আরেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে তার পরিবার। হুজাইফা রশিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত আরও বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, হুজাইফা রশিদসহ গত এগার দিনে বর্তমান ও সাবেক চারজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘‘গত ১২ নভেম্বর বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফাহমিদা রেজা সিলভী নামে এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন। এর দুইদিন পর ১৪ নভেম্বর আত্মহত্যা করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী লাইলা আঞ্জুমান ইভা। এছাড়া গত ১৬ নভেম্বর মেহের নিগার দানি নামে ইংরেজি বিভাগের সাবেক এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেন।’’ এসব খবরের মধ্যেই এসেছে আরেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর।
এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে আলোড়ন তুলেছিল ঢাবি ফিন্যান্সের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তরুণ হোসেন এবং সংগীত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের মুশফিক বাবু নামের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর।
অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই এসব খবরের একমাত্র শিরোনাম নয়। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও আত্মহত্যার খবরে শিরোনাম হচ্ছে। কয়েকমাস আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মুমতা হেনা নামে এক ছাত্রী এবং একই সেশনের তার প্রেমিক রোকনুজ্জামান আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে।
শুধু তারাই নয়, এ তালিকায় রয়েছেন সাতক্ষীরার সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহর ছেলে অনীক আজিজ।
বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মানসিক বিষণ্ণতা, বেকারত্ব, প্রেম এবং পারিবারিক কলহকে দায়ী করছেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয় যেমন দায় এড়াতে পারে না, ঠিক তেমনই শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হবে। কারণ, আত্মহত্যা কখনোই সমাধান নয়।
এক্ষেত্রে ক্লাসে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থী এবং তরুণ সমাজ কেন অকালে এভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার বিকল্প নেই বলেও আমরা মনে করি।
পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, বন্ধু-বান্ধবদের সমন্বয়ে আত্মবিধ্বংসী পথ থেকে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে সকলকে সচেষ্ট হতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।