জীবনের কাছে পরাজিত হয়ে অনেকেই নিজেকে শেষ করে দিতে আত্মহত্যার আশ্রয় নেন। আবার কেউ আছেন আত্মহত্যার হাত থেকে তাদেরকে বাঁচিয়ে দেন।
এমনই একজন স্বেচ্ছাসেবী হায়দরাবাদের শিবা ইলিয়াস হানুমান্থু। গত কয়েক বছরে ১শ’ ১০ জনকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তিনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, প্রায় এক দশক আগে শিবা তার দত্তক ভাই পবনকে হারান। মূলত আহত্মহত্যা করতে ঝাঁপিয়ে পড়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে গিয়ে পানিতে ডুবে তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়। সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনা থেকে শিবা সিদ্ধান্ত নেন, তিনি হুসাইন সাগর লেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করতে আসাদের জীবন বাঁচাবেন।
সেই লক্ষ্য থেকে তিনি বিগত কয়েক বছরে ১১০ জনকে বাঁচিয়েছেন, আর লেক থেকে উদ্ধার করেছেন অগণিত মরদেহ, যাদেরকে তিনি বাঁচাতে পারেননি!
মাত্র এক সপ্তাহ আগের ঘটনা। এক ব্যক্তি সকাল ১১টার দিকে হুসেন সাগরে আত্মহত্যা করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাকে বাঁচানোর জন্য এক পুলিশ কনস্টেবল পানিতে ঝাঁপ দেন। কিন্তু ওই পুলিশও বিপদে পড়ে গেলে দু’জনকে বাঁচাতে শিবাকে ঝাঁপ দিতে হয় পানিতে।
তার এই অবদানের কথা শুনে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিতে এগিয়ে আসেন।
শিবা তার স্ত্রী এবং এক শিশু সন্তানকে নিয়ে লেকের কাছেই তাবু করে বসবাস করেন। হুসেন সাগর হাদরাবাদের প্রাণকেন্দ্রের একটি লেক।
গত বছর তিনি একজন ৯০ বছর বয়স্ক মহিলাকে বাঁচিয়েছিলেন। ‘যিনি তার সন্তানদের বোঝা হতে চান না বলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পানিতে’, বলছিলেন ৩৪ বছর বয়সী শিবা।
তিনি বলেন, আমি এখানে অনেক মহিলাকে দেখেছি, যারা প্রায়ই তাদের স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আত্মহত্যা করতে আসেন। তাদের কাছে যেন এটা অনেক সহজ ব্যাপার!
মানুষকে বাঁচানোর এই কাজটি অনেক কঠিন! অনেক লোককে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কয়েকবার আহত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালে এবং ২০১৬ সালে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়া লোকদের উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হন।
তিনি বলেন, আমি একজনকে বাঁচাতে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি, তখন আমার বুক এবং কাঁধের বাম দিকে একটি লোহার রড ঢুকে যায়। আমি গান্ধী হাসাপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করি। আরেকবার দুপুর ২টা নাগাদ যখন একটি ছেলে ঝাঁপ দিয়ে আহত্মহত্যার চেষ্টা করে, তখন তাকে বাঁচাতে লাফ দেই। তখন একটি পেরেক আমার পায়ে ঢুকে যায়।
তিনি বলছেন, যদি সরকার নিরাপত্তার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে, তাহলে আমি আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবো এবং আরো বেশি লোককে বাঁচাতে পারবো।
তিনি মৃত দেহ উদ্ধার এবং জীবন বাঁচানোর জন্য কোনো পুরষ্কার বা সম্মানি গ্রহণ করেন না। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় কিছু দেন তা গ্রহণ করেন।
স্বেচ্ছায় এই মহৎ কর্মটির পাশাপাশি তেলেগু সিনেমায় কিছু ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেও অল্প আয় রোজগার করেন বলে জানালেন শিবা।