চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘আগামী ২০ বছরে সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ থাকবে না’

জলবায়ু ও দুর্যোগ বিষয়ে কাজ করা গবেষক, সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলা করে উদ্যোগ না নিলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরী গাছ থাকবে না। সেই সাথে ওই এলাকার মানুষ নানা শারীরিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়বেন।

শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ওয়ারশ আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বিষয়ক কর্মশালা’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন জলবায়ু ও দুর্যোগ বিষয়ে কাজ করা গবেষক, সরকারী ও বেসরকারী কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ নিত্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। এ সমস্যার সমাধান তাই অতীব জরুরী। প্রয়োজন দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তহবিল গঠনের। ২০১৬ সালে সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের সকল আলোচনা এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় দরকষাকষিতে ক্ষয় ও ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। আবার এই বছরই ‘ক্ষয় ও ক্ষতি’ বিষয়ক ওয়ারশ আন্তর্জাতিক দলিলের কর্ম পরিকল্পনার উপর দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। যার ভিত্তিতে এই দলিলটিকে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে”।

অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, এ বছরের ডিসেম্বরে বিশ্বের ৫০ উন্নয়নশীল দেশ জলবায়ু ও পরিবেশগত পরিবর্তনের ক্ষতি নিরূপণ করে বৈশ্বিকভাবে দাবি তুলে ধরা হবে। সেই সম্মেলনে বাংলাদেশ যদি সঠিকভাবে দাবি তুলে ধরতে না পারে, তাবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ ও জলবাযু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ‘জলবায়ু ও দুর্যোগ মোকাবেলায় যদি সঠিকভাবে কাজ না করা হয়, তবে আগামী ২০/৩০ বছরের মধ্যে সুন্দরবনে কোনো সুন্দরী গাছ থাকবে না। এখনই ওই এলাকার মানুষকে লবণাক্ততার কারণে পানি কিনে খেতে হয়। যে কারণে যতটুকু ভাল পানি তাদের পান করা দরকার, সেটি তারা পারছে না।

তিনি আরো বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সেটি এখনো নিরূপিত হচ্ছে না। নেই সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ। মানুষের আর্থিক, সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের একটা দাবি ছিল, দুর্যোগের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা করা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, “আমরা নিজেরা সংগঠিত না। দুর্যোগের ফলে যে ক্ষতি হচ্ছে তার দায় আমাদের না। এজন্য উন্নত দেশগুলো দায়ী। তাদের কাছে আমাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে হবে। আর সেটি শক্তভাবে করতে হলে আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। আমরা সেটি করতে পারছি না। জলবায়ু বা দুর্যোগ ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারছি না। এর মূল কারণ আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি না। স্বাধীনতার ৪৫ বছর হলো। কিন্তু দুর্যোগ ও জলবায়ু ইস্যুতে আমরা শক্ত অবস্থানে যেতে পারি নি।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, “জলবায়ু ও দুর্যোগ নিয়ে সবার মধ্যে পরিষ্কার ও শক্ত ধারণা তৈরি করতে হবে। আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের জন্য একসঙ্গে উদ্যোগ নিতে হবে। সেটি না করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শারীরিকভাবে আরো বেশি সমস্যায় পড়বেন”।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় জাতীয় কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব উত্থাপনের উদ্দেশ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, এনএসিওএম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং একশনএইড বাংলাদেশ দু’দিনের এই কর্মশালার আয়োজন করে।